কমলা গল্প

জনেশ লোটন রায়

শ্যামলা-বর্ণ। গায়ে মাংসটা তেমন একটা লাগেনি তখনও। তবুও নাম তার কমলা। বয়স যখন সাড়ে বারো। পাড়ার ছেলেপুলেদের চোখের সীমানায় তখনও সে অনুপস্থিত।
***
বুড়ো গাছের উঠে যাওয়া বিচ্ছিরি বাকলের মতোন চুন-সুরকির একতলা বাড়িটির মাঝ বরাবর সীমানা প্রাচীর দিয়ে দুটি পরিবারের বসত। কমলারা থাকে বাড়ির উত্তরের দিকটায়। কমলা কোন ঘরে, কার সাথে শোয়, কি পড়ে শোয়, বালিশের তলায় কোনো নায়কের ছবি রাখে কিনা, পড়ার টেবিলটা কোথায়, পড়ার টেবিলেই আয়নাটা রাখে কিনা, পড়ার ফাঁকে কতবার নিজেকে দেখে? আলনাটা কোথায়, কয়টা জামা-কাপড়, কেমন করে কোথায় স্নান সারে ইত্যাদি ইত্যাদি–এসব আমার জানার কথা নয়।
***
বয়স যখন ষোলো–পাড়ার সমবয়সী মেয়েরা তখন হালের ফ্যাশনে পারঙ্গম। উঠতি বয়সের ছোকরাদের কেমন করে দৃষ্টি আটকাতে হয় তা তাদের ভালোভাবেই রপ্ত। অন্তর্বাসের তলায় নরম কাপড় গুঁজে শৈল্পিক হতে যখন তাদের প্রচেষ্টা–কমলা তখন একেবারেই প্রাকৃতিক, একেবারে নিজস্ব! শীর্ণ-তীক্ষ্ণ-শ্যামলা প্রায় সোমত্ত্ব কমলা দৃঢ পায়ে বেরিয়ে আসে ক্ষয়ে যাওয়া পৌরাণিক চুন-সুরকির আবাস থেকে।
***
চল্লিশ বছর ধরে যাপিত জীবনে সেই কমলাকে দেখি, খুব কাছ থেকে দেখি, নিত্যদিন দেখি। কমলা সেই কমলা!