একটু একটু করে মরা

শ্যামসন বুড়ন

পাশাপাশি বাসা।ছোটবেলা থেকেই খেলার সাথি। লেখাপড়া-কৈশোর-যৌবন এবং অবধারিতভাবেই “আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো না!” গোলাপের পাপড়ির মতো অপরূপা সীমার আচানক বিয়ে হয়ে গেল! কোথা থেকে কোন এক কোটি পতি এসে দিপু-সীমার ভালোবাসার সংসার ভেঙে-চুরে চুরমার করে দিয়ে গেল।

সেই থেকে দিপু পাগল। সুন্দর স্বাস্থ্যবান যুবকটি প্যাকেটে প্যাকেটে সিগারেট খায়…রাস্তায় দাঁড়িয়ে মনের সুখে যাকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালা গালি করে! মাতলামি করে…গান গায়, চিৎকার করে…অট্টহাসি দেয় সিনেমার ভিলেনের মতো…আরো কত কী? সবার মায়া পড়ে যায় পাগলা দিপুর জন্য। জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা। যদি পাগলামি ভালো হয়, বৌর ভালোবাসার কারণে!

সীমা এখন তিনটি সন্তানের কোটিপতি মা। দুধের মতো সাদা দাঁতগুলি পান খেয়ে খেয়ে রক্ত-লাল। লাউয়ের ডগার মতো ছিপছিপে-তন্বী সীমা এখন, পুরানো দিনের রেইনট্রি’র মতো মোটা একদলা মাংসপিণ্ড। রিকশাওয়ালা ভয়ে বলে, আফা, চাক্ক্যায় বাতাস নাই।

প্রতিদিন ভাতের চেয়ে ঔষুধ বেশি খেতে হয়। কী রোগ নেই তার?

ঈদের ছুটিতে সীমা বাড়ি আসে। দেখা হয় দুজনের। একসাথে সেমাই খায়।
– এভাবে আর কতদিন পাগলামি করবা?
– যতদিন ভালোবাসা থাকে। তোমার এই অবস্থা কেন? ছিলা গোলাপ গাছ, হইলা বটগাছ।
– মানুষতো একমুহূর্তে মরে। আমি না হয় একটু একটু করে মরছি…ধারাবাহিক আত্মহত্যা!
– ফিরে এসো, সীমা। এভাবে নিজেকে তিলতিল করে ধ্বংস করার কোনো অধিকার তোমার নেই।
– বেশতো। তাহলে তুমি পাগলামি ছেড়ে বিয়ে করো?

পরের ঈদের আগেই সুদর্শন দিপু পাগলা বিয়ে করে ফেললো। কালো কুচকুচে এক বয়স্ক মোটা নারী বটগাছকে। ততক্ষণে এ খবর পেয়ে গেছে সীমা! হিংসায়-ইর্ষায়-রাগে-ক্ষোভে-অপমানে-বেদনায় হার্টের অসুখ বেড়ে যায় সীমার। অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে হাসপাতালে….পিঁ-পু-পিঁ-পু……।