পৃথা রায় চৌধুরী’র কবিতা

লেখক পরিচিতি

জন্মস্থান ভারতবর্ষের ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ শহরে। সাহিত্যচর্চা শুরু, ছোটবেলা – স্কুলে থাকতেই। প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ও পরিবেশ বিজ্ঞানে ডক্টরেট। ২০১২ সাল থেকে এপার-ওপার বাংলার বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকা ও অনলাইন ওয়েবম্যাগ ও ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার একক কাব্যগ্রন্থ ছয়টি…”মন্দ মেয়ের সেলফি”, “জন্মান্তরে সিসিফাস”, “শব্দ এক পুরুষপাখি”, “চতুর্থ প্রহরে নক্ষত্রের ছায়া”, “ঘড়ির তেরো নম্বর কাঁটা” ও “মায়াকীয়া”। এছাড়া এপার-ওপার বাংলার বিভিন্ন কবিতা সংকলনে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কিছু কাব্য সঙ্কলনের সম্পাদনা করেছেন ও ক্ষেপচুরিয়াস নামক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর মধ্যে, “আমি অনন্যা” পত্রিকার  সম্পাদকমণ্ডলীতে আছেন এবং ‘শহর’ পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে “শব্দের মিছিল” সাহিত্যগোষ্ঠীর তরফ থেকে “আত্মার স্পন্দন” ১৪২৩ সম্মাননা অর্জন করেছেন।


শোনা যায়

অতএব, ফুলবানু ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে না
ঠিক হতেই, লক্ষ ফণা ছুঁয়ে দিলো তার সমস্ত
ঝর্ণা দেওয়াল। তাকিয়ে থেকে বাগান গড়ো,
ও রাধেশ্যাম...
পূর্ণতা পেতে চাইলে, লোকে গো শ্যামের রাই
দেখলে বেচাল।
অন্ধকার, তুমি পাশ ফেরো নিজের মতো;
চাই না চাই বোঝার লুকোচুরি নিঃশ্বাস নেয়,
প্রহরান্তরের পাখালি সুর। খেলায় জিতে এসেছো
যত ছলনায় গো ললিতা, শাপ খণ্ডিয়ো,
দোষ নিও না ধর্মভোর।
প্রতি অজুহাতে বুলিয়ে চলো,
তোমাকে ভালোবাসি পালক
কি নামে ডাকলে এবার বলবে
...শুনছি, বলো।

মোরামের কথা

আশ্চর্য রেখাপাত ছিলো, তোমার হা-পিত্যেশ পিঠের আলোয়।
দিলখোলা বন্দিশ হয়ে যেতাম গুড় গন্ধী চায়ের ভাঁড়ে।
পূর্ণিমা চলে যায় কেন, মহীপাল?
কুঠুরিতে বসে থাকি কফি বীন্স জগতে, অথচ জিভে গুড় গন্ধ।
বেড়াজাল ভেদ করে খেজুর রসের রাস্তায় তোমায় বলে আসি আবার,
খেজুর পাতায় বিশ্বস্ত বুক তোমার।
চাঁদ উঠে আসে, তার মাঝে ভরা কোটাল।
রেড়ির তেল চেনাবে, চেনাবে ছাতিমের দমবন্ধ শ্বাস!
উঁচু সেই অসমান টিলার নিচে ধকধক করে এখনো চলে রেল?
গেঁয়ো হাতলের ছাতা কেড়ে নেবো আবার, তুমি হেসো লালমাটি।
এতো নামে ডেকে নিই, স্বপ্নেও ধরা দিয়ে যাও।
পদ্ম চেয়েছিলাম বলে দুই দশক জুড়ে তোমার পদ্ম চাষ।
ছুঁয়ে এলাম তোমার হা-পিত্যেশ পিঠের গুড় গন্ধ আলো।

অমানিশি ও মানুষী

অনেক আলো পেরিয়ে যাচ্ছি,
কাঁসর ঘন্টা, যাবতীয় উদ্দাম পবিত্রতা
তোমার কাঁধ বেয়ে যে আলো পিছলে যাচ্ছে,
মহীপাল
মেখে নিচ্ছি গঙ্গাবুকের এপার থেকে।
তোমার বাঁশির টানে আঁচল করে দেবো সুর ছাপা
আমায় কঞ্চি বাঁশের তীর করবে, ধনুক ছিলা শরীর?
আদিমানব, করমচা নখ বিঁধিয়ে দেখে নাও
কিছু ধুলোবালির গড়পড়তা খিদে, মায়ার টান;
গোপন সূত্রে ফেলে আসো তোমার মাদুরকাঠির মণিবন্ধ।
ফিরে ফিরে আসি সহিসের বুকে পা রেখে
অস্থি, মজ্জা, রক্ত... গল্প বলো, ভেজা প্রদীপ।

মধ্যবিত্ত কবিতা

তিনটে চারটে পাঁচটা করে শাড়ি জমিয়েছি…
জমিয়েছি চেয়ে চিন্তে,
বালাপোষগুলো জরাগ্রস্ত হয়েছে,
কিছু কুৎসিত পুরনো শাড়ি থেকে
জন্ম নেবে কিছু নতুন বালাপোষ
পুরনো জমাট তুলো ঝেড়ে ধুনে জন্মাবে ভরন্ত ওম,
এসব কথা বলছিল অতি আধুনিকা এক কবি।
চেয়ে চিন্তের ভয়ে কিছু শাড়ি কিনে ফেলেছি আজই।

আফ্রোদিতি

স্নানকালে বাসী কাপড় ছেড়ে ফেলি। জলে মেঝে ঝিকিয়ে উঠলে আর নিজেকে দেখি না। বাইরের নারকোল ঝিরিছায়াকেও সরাতে চাই শার্সি থেকে। এমনভাবে জল পুড়িয়ে যেতে পারে, তার কালক্ষণ ধার্য করে দিলো কে?

শ্যাম্পুর আধখালি কৌটো ঝাঁকিয়ে ছুঁড়ে ফেলি ঘনিয়ে আসা দুটো চারটে চুলের রূপো। কি এমন স্লোগান ছিলো মিছিলের, যাতে বন্যার মতো চোখে উঠে এল প্রোগ্রেসিভ লেন্স! বাবার কথার আর কখনো অবাধ্য হবো না, একবার ফিরে যাই সেই বাধ্যমন্দিরে।

ঠিক জানা নেই, ক’হাত দূরত্ব থাকলে তোমাদের বন্ধু ভাবা যায়। লিঙ্গভেদে গোনা হোক হাতের দূরত্ব, ঠিক কতো ইঞ্চি হাসলে তাকে প্লাস্টিক বলে বুঝে ফেলবে না কেউ? মেটালিক কাস্তে আকাশ ফালা করলে, শুরু রোম্যান্সের পয়লা ধাপ।

বেড়াবিনুনিতে বা কলাবিনুনিতে ফিরতে চাইলে এখন বাধা দেয় বড়ে গুলাম আলি। বিরহ নিতে নিতে ভালোবেসে ফেলি কোনো মিথপ্রেমিককে। ঝিনুকের খোলসে বা আয়নায়, ডলফিন বা রাজহংসীতে আমাকেই দেখেছিলে তুমি, দীর্ঘশ্বাস।