কাচঘেরা শহুরে দোকানের সামনে
একটা ব্যাটারি লাগানো ঘোড়া কিনবে বলে
বায়না ধরলো ভিখারিনীর ছেলে।
তার বিধবা মা ভয় দেখিয়ে দেখিয়ে বললেন
‘ বাঘ আছে ভেতরে, খেয়ে নেবে ! “
বিস্ময়ে তাকালো সে ! দোকানের মধ্যে বাঘ ?
তারপর ছেলেটিকে কোলে নিয়ে গাছের ছায়ায় বসলেন মা।
শীতল ছায়া আর বুক জুড়োনো হাওয়া ভুলিয়ে দিল সব ক্লান্তি।
তারপর হঠাৎ
একটা সাদা তাজা ঘোড়া এসে হাঁটুগেঁড়ে বসে বললো–
‘ উঠে পড়ুন মহারাজ, ঘুরে আসি আপনার পরগণায় ‘
ছেলেটা আনন্দে আটখানা ! বারবার তাকায় মায়ের মুখে।
ঘোড়ার পিঠে উঠেই পড়লো সে মায়ের সম্মতিতে।
দুলতে দুলতে চললো ঘোড়া তার মহারাজকে পিঠে নিয়ে।
চারদিকে প্রজাদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি- পুকুর- ক্ষেতখামার,
চোখ জুড়োনো বহমান নদী, বুকভরা নিবিড় সবুজ অরণ্য।
ঘোড়াটা এবার বললো,
‘চলুন আপনাকে কুমোরবাড়ি নিয়ে যাই মহারাজ।
কত ঘোড়া চাই আপনার?
লাল ঘোড়া, নীল ঘোড়া, হলুদ ঘোড়া !
নরম- কোমল হাতে গড়া ভালবাসায় রাঙানো।
আর আমি তো আছিই আপনার সেবায়।’
মহারাজ বললেন, ‘যাও… ‘
শ্বেতঅশ্বের পিঠে চড়ে মহারাজ প্রবেশ করলেন কুমোরপাড়ায় ।
চারদিকে তোলপাড়-ছুটোছুটি- উৎসবের আনন্দ !
রাজা এসেছেন গরীবের পাড়ায়! আমাদের রাজা।
কেউ এসে গড় হয়ে প্রণাম করে, কেউ করে হাতজোড়।
মহারাজ মুগ্ধ চোখে তাকালেন চারদিকে –
সারি সারি মাটির ঘর, হাতে গড়া মাটির তৈজসপত্র
আর নির্লোভ- নিরীহ-নিরহংকারী মাটির মানুষ।
মহারাজ হেসে বললেন –
‘এই রাজ্য তোমাদের, এই রাজ্যের ধনসম্পদ তোমাদের,
আমিও তোমাদেরই। বলো কার কী অভিযোগ। ‘
সন্তান কোলে নিয়ে এগিয়ে এলেন এক বিধবা নারী।
রাজা বললেন, ‘নির্ভয়ে বলো মা কী প্রয়োজন তোমার’
মুখ তুলে কাতর স্বরে বললেন – ‘আমার নয় মহারাজ, আমাদের দাবি –
এই মাটির তৈজসপত্র বিক্রির জন্য একটা আলাদা বাজার হোক।
আমাদের তৈরি মাটির খেলনা কেউ কেনে না মহারাজ।
আমাদের মাটির হাড়ি- সরার দাম নেই, কী করে খাবো বলুন? “
রাজা অভয় দিলেন, দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন –
” আজ থেকে আমার রাজ্যে বিদেশী খেলনার আমদানি বন্ধ
আগামী মাস থেকেই মাটির জিনিসের হাট বসবে বুড়ো বটতলায়
বাইরের রাজ্যে যাবে আমার মাটির বাসন মাটির খেলনা
আর আজ থেকে আমি নিজেও মাটির পাত্রে আহার করবো
রাজবাড়ীর সব তৈজসপত্র যাবে এই কুমোরপাড়া থেকে “
সবাই আনন্দে আত্মহারা, আকাশ কাঁপিয়ে সমবেত জয়ধ্বনি–
‘মহারাজের জয় হোক…’
যেন রক্তমাংসের দেবতা বর দিয়ে গেলেন মানুষের ঘরে এসে।
মহারাজ এবার বললেন–
আমারও যে কিছু চাওয়ার আছে আমার মায়ের কাছে!
বিধবা নারীর কাছে গিয়ে হাত পেতে বললেন –
তোমার হাতে গড়া দুটো মাটির ঘোড়া আমাকে দেবে মা ?
আমার মা কিনে দিতে পারেনি, তুমি দেবে?
জল গড়িয়ে পড়লো সেই স্নেহময়ী মাতৃমূর্তির চোখ থেকে…
এদিকে গগণবিদারী শব্দে গর্জে উঠলো শহুরে মেঘ !
স্তব্ধ হলো সমীরণ, বৃষ্টির দুটো ফোঁটা পড়লো মুখের উপর।
ঘুম ভেঙে গেল ভিখারিনীর ! চোখ ছল ছল করে উঠলো মমতায়।
কেঁদে উঠে ছেলেটাকে জাপটে ধরে বললেন- ‘আমার রাজা ‘