ক্ষত !
বুক সেল্ফের ঝুল সরাতেই
অকস্মাৎ ছিটকে পড়ল
শামসুর রাহমানের একটি
কবিতার বই ‘মাতালা ঋত্বিক’।
পুষ্ট মলাটের অবগুণ্ঠন থেকে
জ্জ্বল জ্জ্বল করে উঠলো মুক্তাক্ষরের
মতোন লেখা …………….
‘আমি তোমাকে
ভালোবাসি প্রিয়তমা’
তৎক্ষনাৎ বুকের মধ্যে শতকোটি বিরহ সংগীত
বেজে উঠলো; যেন বুদ্ধদেব বসুর কবিতার
কঙ্কাবতীর প্রেমের অনুরণন।
তুমি বসে রইলে ঠায়; বিদেশী মশৃন
বর্ণিল টাইলসের মেঝে – হয়তো
নগ্ন আলোতে পৌরানিক কারুকার্যক্ষচিত
কাঠের কেদারায় হেলান দিয়ে। সারাবেলা।
হয়তো তিরিশ বছর পর আজও
মলাটবদ্ধ থেকে গেছে
সেই ভালোবাসার দু’টি ছত্র
‘আমি তোমাকে
ভালোবাসি প্রিয়তমা।’
চিলেকোঠা – ১
আমার চিলেকোঠায় সেদিন রোদ পড়েনি
আবছা আলোয় দেখেছি ‘জয় পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি’।
মাকড়সার জালে ছেয়ে গেছে জানালার ঘুলঘুলি-
তুমি আসবে বলে তবুও আমার আকাঙ্খা…..
চিলেকোঠা – ২
সূর্য তখন মধ্যগগণ জুড়ে।
আমাদের পায়ের শব্দে একজোড়া
বোনা-কবুতর উড়ে গেলো হতচকিত
যেন অবৈধপ্রেমে মত্ত ছিলো দীর্ঘক্ষণ।
চিলেকোঠার এক কোণে ঠাঁই পেয়েছে
কোন এক যুবকের পুরানো দিনের নাটাই-ঘুড়ি।
আমি ইতস্তত একমুঠো আঙ্গুল দিয়ে
তোমার বক্ষের পশমী ওড়ানার মতো
জীর্ণ চিলেকোঠার শরীর থেকে
আলতো সরালাম মাকড়সার জাল
অমনি তুমি চমকে গেলে, যেন;
আনকোরা যুবকের অনভ্যস্ত হাতের স্পর্শে
কেঁপে গেলো মাধবকুণ্ডের পাহাড়ি ঝরনা।
সেই ঝরনার বিনে-রেওয়াজি-সঙ্গিত আজও
আমাকে আকর্ষণ করে তোমার বক্ষ জুড়ে।
চিলেকোঠা – ৩
মাকড়সার জাল আনকোরা আঙ্গুলে সরাতে সরাতে
ঠিক কখন যে পৌঁছে গেলাম তোমার শরীরের কেন্দ্রবিন্দুতে
তখনও আমি জানিনা আমার গন্তব্য কোথায় –
তোমার নিজস্ব উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসে
পলেস্তর-হীন চিলেকোঠার শরীরজুড়ে
লোভাতুর পিঁপড়েদের ইতিউতি।
এমনই সময় জমিদারবাড়ীর বোবা ভৃত্যটির গোঙ্গানির শব্দ
বুঝতে দেরী হলো না – সেই কখন থেকে
মাসিমা ইলিশ-পোলাউ রান্না শেষে বসে আছেন।