ঘুমন্তনিশুতিরা
ঘুমন্ত নিশুতিরা দেহের গন্ধ পেয়ে জেগে ওঠে। কুয়াশার মতো কোমলতা নিয়ে বেড়ে ওঠে উদাসীন ঠোঁট। জানো, মেঘের ছায়া ভাসে না অন্ধকারে। সাদা জন্মপথে ফুটতে থাকে হলুদ ঝিঙেফুল, ক্লান্ত পাখিরা ঘুমায় নিজেদের সহবাস সেরে। এইসব জলধির ভাষা দিয়ে, বাম বুকে লেখা যতো ক্ষুধা, জমা হয় হাওয়ার উদরে।
প্রিয়রাজহাঁস
তোমার প্রিয় রাজহাঁস আজ ফিরবে না ঘরে
দুপুরের হাট শেষে সে হেঁটে গেছে
হাটুরের পায়ের চিহ্ন ধরে
শৈশবে তার খেলার সাথী ছিলো সাঁওতাল মেয়ে;
সাদা ট্রাউজারে লেগে আছে যে হলুদি রং
এ তো কোনো রোদের গান নয়
মানুষের পিছুটানের মতো এইসব রাতে
নির্ঘুম স্টেশন হয়ে জেগে থাকে যাপিত জীবন;
প্রিয় রাজহাঁস-
সাদা জুঁইফুলের মতো বেঁচে থাকে স্মৃতি
সে যেন ডাকে ক্লান্ত ট্রেনের মতো করে
প্রিয় রাজহাঁস-
সে যেন এক ডানা ঝাপটানো সুর
সে হেঁটে গেছে পথিকের পায়ের চিহ্ন ধরে
প্রিয় রাজহাঁস-
সে যেন এক ধীরে বয়ে যাওয়া নদী সে আজ ফিরবে না ঘরে।
ঘাসের জীবন
যদি এই শীতের পরেও বেঁচে থাকি
যদি শতাব্দী পেরিয়ে ফিরে আসো গানে
তবে জানালা খুলে আর ডাকবো না হাওয়া
শুধু দূরে, নিঃশব্দে হেঁটে যাবে ফাঁকা ট্রেন-
যদি তোমাকে ডাকতে পারি ক্লান্ত হুঁইসেলের মতো
যদি আবারও বসন্ত আসে বেঁচে যাওয়া জীবনে
তবে তোমার সাথে দেখা হবে ঘেটুফুল
দেখা হবে সাদা বকের জীবন
সকল পরিচয় শেষে
যদি আবারও জিজ্ঞেস করো নাম
তবে তোমাকে শুনাবো না কোনো উজ্জ্বল মাছের কথা
যে চুক্তি ছিলো আমাদের মাঝে
চলো সেই কথা ভুলে, আবার গান গেয়ে উঠি
আমাদের শুধু থেকে যাওয়া বারবার
কবিতায় অথবা সাদা জুঁইফুলের মতো যে স্মৃতি
সেখানে আবার ফিরেছো তুমি,
আজও বেঁচে আছি সকল অঘটন থেকে
ঘেটুফুল, যদি দেখা হয় রোদ পড়ে গেলে
কী কথা বলবে তখন?
কালো কিশোরীর মতো শুয়ে থাকে ঘাসের জীবন।
এইসব গানে
যেসব গানের ভেতরে বেহালার ব্যথা বেজে ওঠে
সেইসব গান শুনে শুনে
আমার হঠাৎ কান্না আসে,
হঠাৎ অশ্রু ঝরে পড়ে, এইসব গানে কাউকে খুঁজতে গেলে
আমি বাজতে থাকি মাটির সরোদের মতো;
অশ্রুর উষ্ণতা নিয়ে, এইসব শীতের রাতে
মাঝে মাঝে মনে হয় হেঁটে চলে যাই
কুয়াশার গন্ধের পথ ধরে,
যে পথ ধরেই ডুবে মরতে গেছে যুবতী কোনো নদী-
আর আকাশ হারিয়ে গেলে এইসব গানে
বিনিদ্র রাত শুধু নীল হয়ে ফিরে আসে,
যখন কোনো মানুষ করুণ সুর নিয়ে বেজে ওঠে
তখন সেতারের ব্যথা হয়ে বাজতে ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে এইসব গানে মিশে থাকি
না পাওয়ার যন্ত্রণা হয়ে-
এইসব গান শুনে শুনে, আমার খুব গান হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।