খাঁচার ভিতর অচিন পাখি – লালন সাঁই

শ্যামসন বুড়ন

বাউল গান লোকায়ত বাঙালির ভাবমানসের জাতীয় সংগীত। বাউলসাধক লালন সাঁই (১৭৭৪-১৮৯০) সেই মরমি ভাবজগতের গানের রাজা – বাংলার বাউলের শিরোমণি। বাউল গানের বিপুল লোকপ্রিয়তার মূলে তাঁর অবদানকেই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করা যায়। আজ প্রায় দুই শতাব্দীকাল তাঁর গান বাঙালির মরমি মানসের অধ্যাত্ম-ক্ষুধা ও রস-তৃষ্ণা মিটিয়ে আসছে। আর এ ধারাটি পুষ্ট হয়েছে পঞ্চদশ শতাব্দীর তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের ভাব, রাধাকৃষ্ণবাদ, বৈষ্ণব সহজিয়া তত্ত্ব এবং সুফি দর্শনের প্রভাবে। নিজ-দেহের মধ্যে ঈশ্বরকে পাওয়ার তীব্র আকুলতা থেকে বাউল ধারার সৃষ্টি। বাউল সাধকদের সাধনার মাধ্যম হচ্ছে গান। সাধকের কাছে সাধন-ভজনের গূঢ়তত্ত্ব প্রকাশ পায় গানের মাধ্যমেই। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে যে পরম সুন্দর ঈশ্বরের উপস্হিতি, সেই অদেখাকে দেখা আর অধরাকে ধরাই বাউল সাধন-ভজনের উদ্দেশ্য। ইহজাগতিক কিংবা পারলৌকিক কোনো প্রাপ্তির জন্য বাউল সাধন-ভজন করে না। একান্ত মানবিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার বশবর্তী হয়ে তাঁরা ধর্মচর্চা করেন।

লালনের প্রধান পরিচয় তাঁর গানে আর সেই গানই তাঁকে দুই শতাব্দী বাঁচিয়ে-জাগিয়ে রেখেছে। বাংলার অপর কোনো মরমি সাধক বা লোককবিই লালনের মতো এমন বিপুল পরিচিতি, ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা ও অসামান্য প্রতিষ্ঠা-অর্জনে সক্ষম হন নি। তাঁর পরিচয় ও প্রতিষ্ঠার পরিধি আজ দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে বিশ্বের ভূগোল স্পর্শ করেছে। তাঁর প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বে লালন বাংলাদেশের তথা বঙ্গ-সংস্কৃতির প্রতিনিধি-ব্যক্তিত্ব হিসেবে গৃহীত হবেন, সে-সম্ভাবনা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় জাতিসংঘের শিক্ষা ও গবেষণা সংস্হা ইউনেস্কো তার সদর দপ্তর প্যারিস থেকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাউল গানকে মানবতার ধারক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

সবলোকে কয় লালন কী জাত সংসারে
কুষ্টিয়া তথা নদীয়া মূলত আউল-বাউল-ফকির-বৈষ্ণবের দেশ। এই অঞ্চল লোকসংস্কৃতি ও মরমি সাধনার একটি উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। লালন সাঁই ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সেই সময়ের নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গড়াই নদীর তীরবর্তী ভাঁড়ারা গ্রামে (চাপড়া গ্রাম সংলগ্ন) জন্মগ্রহণ করেন। হিন্দু কায়স্হ পরিবারের সন্তান লালনের জনক-জননীর নাম যথাক্রমে মাধব কর ও পদ্মাবতী। কথিত আছে যে, তীর্থভ্রমণ বা গঙ্গাস্নান সেরে বাড়ি ফেরার পথে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে সংজ্ঞাহীন দেহ নিয়ে নদীতে ভাসতে-ভাসতে কূলে এসে ভেড়ে। এ অবস্হায় তাঁকে উদ্ধার করে মৌলানা মলম শাহ ও তাঁর স্ত্রী মতিজান। সুস্থ হয়ে মুখে বসন্তের দাগ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান, কিন্তু গ্রামের সমাজপতি ও আত্মীয়স্বজন মুসলমানের ঘরে অন্নজল-গ্রহণের অপরাধে এবং পারলৌকিক ক্রিয়া-অনুষ্ঠান সম্পন্নের জন্য তাঁকে সমাজে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। সমাজ ও স্বজন কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত লালন ব্যথিত ও অভিমান-ক্ষুব্ধ হয়ে চিরতরে গৃহত্যাগ করেন।

লালন তাঁর যৌবনের মধ্যভাগে গৃহত্যাগ করেন। সমাজ-সংসার-বিচ্যুত লালন জগৎ ও জীবন-জিজ্ঞাসার জবাব খুঁজে পেলেন সিরাজ সাঁই নামক এক তত্ত্বজ্ঞ সিদ্ধ বাউল গুরুর সান্নিধ্যে এসে। লালন এই সিরাজ সাঁইয়ের কাছেই বাউল মতবাদে দীক্ষাগ্রহণ করেন। বাউল মতবাদে দীক্ষাগ্রহণের পর গুরুর নির্দেশে লালন কুষ্টিয়া শহরের নিকটবর্তী ছেঁউড়িয়া গ্রামে এসে ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে আখড়া স্হাপন করেন। লালন সাঁই বাউল সাধনার সিদ্ধপুরুষ। কাহার সম্প্রদায়ভুক্ত বাউলগুরু সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষাগ্রহণের পর তাঁর প্রকৃত সাধক-জীবনের সূচনা। তবে, সে-সাধনার লক্ষ্য মানুষ। ‘মানুষ তত্ত্ব যার সত্য হয় মনে/সেকি অন্য তত্ত্ব মানে?’ তবে মানবকল্যাণ কামনায় সবচেয়ে বেশি সুর ধ্বনিত হয়েছে মরমি সাধক লালনের গানে। লালনের সাম্যবাদী চিন্তাই আজকের উদার মানবতাবাদ। যখন মার্ক্সবাদের জন্মই হয় নি, তখন বাংলাদেশের এক নিভৃত পল্লিতে বসে নিরক্ষর লালন লেখেন, ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে, যেদিন হিন্দু-মুসলমান/বৌদ্ধ খ্রিষ্টান/জাতিগোত্র নাহি রবে শোনায়ে লোভের বুলি/নেবে না কাঁধের ঝুলি/ইতর আতরাফ বলি/দূরে ঠেলে না দেবে/আমীর ফকির হয়ে এক ঠাঁই/সবার পাওনা খাবে সবাই/আশরাফ বলিয়া রেহাই/তবে কেউ নাহি পাবে’।

সত্য বল, সুপথে চল ওরে আমার মন
হিতকরী পত্রিকায় (৩১ অক্টোবর, ১৮৯০) লালনের ধর্ম ও সাধনজীবন সম্পর্কে মূল্যবান কিছু মন্তব্য লেখা হয়, যেমন – ‘তিনি (লালন) ধর্মজীবনে বিলক্ষণ উন্নত ছিলেন বোধ হয়। মিথ্যা, জুয়াচুরিকে লালন বড়ই ঘৃণা করিতেন। নিজে লেখাপড়া জানিতেন না; কিন্তু তাঁহার রচিত অসংখ্য গান শুনিলে তাঁহাকে পরম পণ্ডিত বলিয়া বোধ হয়। তিনি কোনো শাস্ত্রই পড়েন নাই; কিন্তু ধর্ম্মালাপে তাঁহাকে বিলক্ষণ শাস্ত্রবিদ বলিয়া বোধ হইত। বাস্তবিক ধর্মসাধনে তাঁহার অর্ন্তদৃষ্টি খুলিয়া যাওয়ায় ধর্মের সারতত্ত্ব তাঁহার জানিবার অবশিষ্ট ছিল না। লালন নিজে কোনো সামপ্রদায়িক ধর্ম্মাবলম্বী ছিলেন না; অথচ সকল ধর্মের লোকই তাঁহাকে আপন বলিয়া জানিত। …তিনি একজন পরম ধার্মিক ও সাধু ছিলেন, তৎসম্বন্ধে কাহারও মতদ্বৈধ নাই’।

লালন ছিলেন ধর্মপরায়ণ, চরিত্রবান, সত্যাশ্রয়ী, অসামপ্রদায়িক, সংস্কারমুক্ত, তত্ত্বজ্ঞানী, সদগুরু, প্রচারবিমুখ, মাতৃভক্ত, কর্তব্যনিষ্ঠ ও দৃঢ়চিত্ত সংগ্রামী। লালন ছোটবেলা থেকেই ধর্মনিষ্ঠ ছিলেন। অবশ্য তাঁর ধর্মচেতনা ছিল আনুষ্ঠানিক ধর্ম নয়, লোকায়ত মরমি সাধনার অন্তর্গত। তিনি ছিলেন পুণ্যাত্মা, সচ্চরিত্রের অধিকারী, মিথ্যাচারকে তিনি কখনো প্রশ্রয় দেন নি।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবধর্মের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ লালন ছিলেন সমপ্রদায়-সমপ্রীতির প্রবক্তা। হিন্দু-মুসলমান মিলনের সেতুস্বরূপ। সর্বসংস্কারমুক্ত এই মহান সাধক ‘জাতিভেদ জানতেন না এবং সকল ধর্মের লোকই তাঁহাকে আপন বলিয়া জানিত’ – (হিতকরী)। বস্তুত উনিশ শতকে লালনের বাউল গানের সার্বজনীন আবেদনের কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লালনের গানই বাউল সমপ্রদায় সম্পর্কে মানুষকে আগ্রহী করে তোলে। লালনের কারণেই হিন্দু, মুসলমান সমপ্রদায়ের দেহ-তত্ত্ববিদরা সব বিভেদ ভুলে যুত সাধনায় মিলিত হয়। তাঁদের শিষ্য-ভক্তদের মাধ্যমে লালনের গান প্রচার ও প্রসার লাভ করে। নিরক্ষর লালন বিস্ময়কর তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। প্রচারবিমুখ, মৃদুস্বভাবী এই সাধক নীরবে-নিভৃতে সাধনায় আত্মনিমগ্ন থাকাতেই পছন্দ করতেন। তাই সাধন-ক্ষেত্রে অতীত-জীবনের পরিচয় প্রদানে অনিচ্ছুক ছিলেন। নিজের জাত-ধর্ম প্রসঙ্গে, তার কোনো জবাব না দিয়ে বরং এই প্রবণতাকে অসার বিবেচনা করে সামপ্রদায়িক ভেদ-বিভেদ ও ধর্মীয় গণ্ডির ঊর্ধ্বে নিজেকে একজন ‘শুদ্ধ মানুষ’ বলে পরিচয় দিয়েছেন। পরম ধার্মিক ও সাধু লালন ছিলেন দশ সহস্র শিষ্যের মানবগুরু। তাঁর কাছে সামপ্রদায়িক ভেদাভেদ ছিল না, ছিল না নারী-পুরুষের পার্থক্য।

আশা পূর্ণ হলো না, আমার মনের বাসনা

নিরক্ষর লালন মুখে-মুখে গান রচনা করতেন আর তাঁর শিষ্যরা সেগুলো খাতায় লিখে রাখতেন। লিপিকারের কাজ করতেন মানিক শাহ ওরফে মানিক পণ্ডিত ও মনিরুদ্দীন শাহ। ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় লালনের জীবিতকালে লিপিবদ্ধ কয়েকটি গানের খাতা ছিল। কিন্তু সেগুলো নানাভাবে বেহাত হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুখানা খাতা নিয়ে গিয়েছিলেন, যা এখন বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত আছে। শিষ্য-ভক্তদের মধ্যেও কেউ-কেউ এই আদি খাতা নিয়ে গিয়ে থাকবেন। লালনের গানের সঠিক হিসাব নেই। তবে, অনুমান করা চলে, তা হয়ত হাজার ছাড়িয়ে যাবে। লালন-অনুসারীদের ধারণা, এই সংখ্যা দশ হাজার। তবে প্রখ্যাত লালন-গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী প্রশিষ্য ইসমাইল শাহ ফকিরের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে লালন-শিষ্য লিপিকৃত ৫৩০টি লালন-গীতির একটি সূচিপত্র সংগ্রহ করেন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় লালন শাহকে একজন দার্শনিক কবি বলেছেন, যিনি আবিষ্কার করেছিলেন আত্মা ও মানুষকে। রবীন্দ্রনাথ আরো বলেন, ‘আমি আবিষ্কার করলাম, তাঁর গানে মানুষ হচ্ছে, নিজের ভেতর, যেখানে তাকে আমরা খুঁজে বেড়াই’।’ রবীন্দ্রনাথ শুধু ভারতবর্ষ নয়, সারা বিশ্বে লালনের কথা প্রচার করেন। বাউলের সহজ-সরল জীবন-যাপন এবং বিশুদ্ধ ধর্মাচরণ তাঁকে মুগ্ধ করে। তাই তিনি বলেন, ‘বাউল ধর্মমতই যথার্থ মানবধর্ম। এতে পূর্ণ মানবত্বের প্রকাশ পেয়েছে’।’ রবীন্দ্রনাথ লালনের ভাবের শিখাটি সারাজীবন বহন করেছেন। তাই অনেকে রবীন্দ্রনাথকে আধুনিক বাউল বলে সম্বোধন করেন। এমনকি আমেরিকার বিখ্যাত কবি অ্যালেন্স গিন্সবার্গের কবিতাও লালনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। লালন-সংগীত-শিল্পী ফরিদা পারভীন এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ গানের রেকর্ড করেছেন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তানভির মোকাম্মেল তৈরি করেন শিল্পসম্মত, সর্বজনগ্রাহ্য লালনের জীবনের ওপর নির্মিত ‘লালন’ ছবি।

কুলের বউ হয়ে মন আর কতদিন থাকবি ঘর
ঘোমটা ফেলে চল না রে যাই সাধ বাজারে

ছেঁউড়িয়ায় আখরা স্হাপনের পর থেকে জীবনের অন্তিম পর্ব পর্যন্ত লালন ফকির সেখানে সার্বক্ষণিক শিষ্য-ভক্ত পরিবৃত থাকতেন। তাঁকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ‘লালন মণ্ডলী – সাধুর সাধবাজার’। মৃত্যুর পূর্বে সারা রাত গান চলেছিল। ‘পার কর হে দয়াল চাঁদ আমারে/ক্ষম হে অপরাধ আমার ভব কারাগারে’ – গাইতে-গাইতে ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর, শুক্রবার ভোর পাঁচটায় ১১৬ বছর বয়সে ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় ‘আমি চলিলাম’ – বলে দেহত্যাগ করেন। লালনের মৃত্যুর পর পারলৌকিক কল্যাণের জন্য শ্রাদ্ধাদি হয় নি, শুধু বাউল সমপ্রদাকে লইয়া মহা উৎসব হয়েছিল। মৃত্যুকালে নিঃসন্তান লালন বিশাখা নামে তাঁর স্ত্রী বা সাধন-সঙ্গিনী বা সেবাদাসী ও পিয়ারী নামে ধর্মকন্যা এবং অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত রেখে যান।

বন্ধ হলে এ হাওয়াটি, মাটির দেহ হবে মাটি
দেখে শুনে হও না খাঁটি…

লালনের মৃত্যুর পরে বাংলায় প্রায় সব অঞ্চলেই তাঁর শিষ্য-ভক্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর খ্যাতিমান ও প্রধান শিষ্যদের মধ্যে শীতল শাহ, ভোলাই শাহ, পাঁচু শাহ, পণ্ডিত মানস শাহ, মনিরুদ্দীন শাহ, কুটু শাহ, মহরম শাহ, জগো শাহ, আরমান শাহ, দুদ্দু শাহ, বলাই শাহ, কদম শাহ, কানাই শাহ, দয়াল শাহ, মতিজান ফকিরানী, ভাঙ্গুড়ী ফকিরানী, কামিনী ফকিরানী, শান্তি ফকিরানীর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। লালন মৃত্যুকালে তাঁর সম্পত্তির কিছু অংশ প্রিয় শিষ্য শীতল শাহকে দান করে গিয়েছিলেন। অপত্য স্নেহের নিদর্শন হিসেবে তিনি তাঁর পালিতা কন্যা পিয়ারীর সঙ্গে ভোলাই শাহের বিবাহ দেন। লালনের ভাবাশ্রিত বাউল কবিদের মধ্যে গগন হরকরা, গোঁসাই গোপাল ও কাঙ্গাল হরিনাথের নাম উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ লালনের ২৯৮টি গান কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রবাসী পত্রিকায় ছেপেছিলেন, কাঙ্গাল হরিনাথের সহায়তায়। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ও লালনের পারস্পরিক সভার ছবি এখনো বর্তমান। এছাড়া অনুমান করা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ লালনের গান প্রথম গগন হরকরার কাছ থেকে শুনে থাকবেন এবং তাঁর লালন-গীতি-সংগ্রহের প্রাথমিক সূত্রও গগন। ক্ষিতিমোহন সেন (১৮৮০-১৯৬০) মন্তব্য করেছেন, ‘লালনের শিষ্যধারার একজন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের হরকরা। তাঁহার নাম ছিল গগন। লালন-প্রভাবিত শখের বাউলের মধ্যে কাঙাল হরিনাথের নাম করতে হয়। তবে, লালনের ভাবাদর্শের শৈল্পিক উত্তরাধিকার সবচেয়ে সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ’।

তথ্যসূত্র: (ক) উইকিপিডিয়া, (খ) দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার, (গ) ড. আবুল আহসান চৌধুরী রচিত বই ‘লালন সাঁইয়ের সন্ধানে’, (ঘ) টুনটুন ফকিরের সাথে আলাপচারিতা