জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মতিথিতে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। ভেবেছিলাম জাতীয় কবি হিসাবে নজরুল সর্ম্পকে আমি বেশ ভালোই জানি। কিন্তু বাস্তবে নজরুলকে নিয়ে এ লেখা প্রস্তুত করতে গিয়ে সে ধারণা পাল্টে গেল। দেখা গেল যে, নজরুল সর্ম্পকে আমি যতটুকু জানি তা নগন্যই। নজরুল সর্ম্পকে অনেক প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ থেকেই প্রশ্নগুলি উত্থাপন করছি।
১.কবি নজরুল ইসলামের সাথে নার্গিসের আকদ (Engagement) না বিয়ে হয়েছিল? আশালতা সেনগুপ্তা (ডাক নাম দুলি, নজরুল প্রদত্ত নাম “প্রমিলা”) প্রমিলাকে বিয়ে করার পূর্বে কবি নজরুল কি নার্গিসকে তালাক দিয়েছিলেন? হিন্দু ধর্মের প্রমিলা সেনগুপ্তা বিয়ের পর “প্রমিলা ইসলাম” হয়েছে, কখনো মুসলমান হননি এবং নজরুল জন্মগত ও ব্যবহারিক জীবনে মুসলমান ছিলেন, যদিও হিন্দু ধর্ম ও পুরান সম্পর্কে তার ছিল অগাধ পান্ডিত্ব।তাহলে কোন নিয়মে বা আইনে (হিন্দুরীতি, মুসুলমানরীতি বা সরকারী আইনে)প্রমিলার সাথে নজরুলের বিয়ে হয়েছিল?
২.কবি ১৯১৯ সাল থেকে লিখতে শুরু করেন এবং ১৯৪২ সালে নির্বাক-মানষিক ভারসাম্য হারান। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্য কর্মে কাঁপিয়ে ফেলেন সমগ্র ভারতবর্ষ। “ব্রিটিশ রাজের যম”কে থামিয়ে দেয়া, আচানক এই অসুখের পিছনে কোন ব্রিটিশিয়ান ষড়যন্ত্র ছিল কিনা?
৩.তদসময়ে সমগ্র বঙ্গীয়-মুসলিম-সমাজ নজরুলকে আত্মার আত্মীয় মনে করতো। সেই সমাজের সামনেই নজরুলের “নারী”,“সাম্য” ইত্যাদি কবিতা পড়ে জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রমান করতে হয়েছিল; শেখ সাহেব সাচ্চা মুসলিম (২১৭ পাতা, শেখ মুজিবর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী)।কবি নজরুল ইসলামের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ ছিল না। কবির অসাম্প্রদাযিক চেতনার প্রতিফলন ঘটেছিল তার ব্যক্তি জীবনে ও সাহিত্য জীবনে। তাহলে, মুসলমান সমাজ পাল্টা রবীন্দ্রনাথ হিসাবে কেন নজরুলকে মুসলমানদের কবি হিসাবে নির্ণয় করলেন এবং করছেন?
৪.১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্দিরা গান্ধির সাথে সুসর্ম্পক থাকার কারণে ৭৩ বৎসর বয়সী নির্বাক-অসুস্থ্য কবিকে স্বাধীন বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে নিয়ে এসে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। এর পিছনে কি কোন কোন রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেছিল? অথবা উল্টো অর্থে ভারত সরকার মুসলমান কবিকে বাংলাদেশে পাঠিয়েও কি দায়মুক্ত হয়নি? কেন ভারতে নজরুল চর্চা ক্রমাগত কমে যাছে? বাংলাদেশে হাজার কন্ঠে “রবিন্দ্র সংগীত” গাওয়া হয়, কিন্তু হাজার কন্ঠে “নজরুল গীতি” গাওয়া হয় না কেন?
৫.১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় ও জাতীয় কবি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু কবির জন্মের ১১৭ বছর পরও বাংলাদেশে তাঁকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়নি কেন?
৬.সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষাবাসি মুসলিম সমাজ মনে করে; কবি নজরুলকে নোবেল পুরুষ্কার দেয়া উচিত ছিল এবং দাবীও রাখে। এ দাবী আরও জোরদার হয় যখন গায়ক বব ডিলান গান লিখে, গান গেয়ে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পান। তবে নজরুলের মত একজন ক্ষণজন্মা সব্যসাচি কবি-সাহ্যিতিক কেন নোবেল পেলেন না? বা পাবেন না? ববের অবদান কি আমাদের নজরুলের চেয়ে বড়?
৭.প্রত্যেক বছর চান রাতে এবং ঈদের দিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ গান প্রচারিত হয়। সবারই মুখস্ত। কিন্তু কে লিখেছে এ গানটি? একটা চকিত জরিপ করা হল। বিভিন্ন রকমের মোট দশ জন মানুষকে প্রশ্নটি করি।
– আচ্ছা; “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” – এ গানটি কার লেখা?
– কবি কাজি নজরুল ইসলামের। যে উত্তর দিল-তার নাম, মমতাজ। শিক্ষগত যোগ্যতা-বিএ.বিএড। বাকী নয়
জন ফেল। এদের মধ্যে জি.পি.এ-৫ ও রয়েছে।