ধানমন্ডির ২৮ নং সড়ক ধরে ধীরলয়ে হাঁটছি। রাস্তা খাঁ খাঁ করছে। বাতাসহীন ক্ষরতাপে পীচ গলতে শুরু করেছে। মানুষ ঘামছে পশুর মত, রাস্তা ঘামছে মানুষের মত। এই কাঁদুনে রাস্তায় হাঁটছি পকেট ভর্তি রোদ্দুর নিয়ে। রোদ ঢুকে যায় পকেট থেকে চামড়ায়। চামড়া থেকে রক্তে। যখনই রক্ত নেচে উঠল, মনে হলো নেচে উঠলো আর একটি ছায়া মুর্তি!
— কোথায় যাচ্ছেন?
— কবি ভবনে। বলেই চমকে তাকাই নারী মুর্তির দিকে। খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেন তাঁর ছবিটি দেখেছি।
— আচ্ছা, কোথায় যেন আপনাকে দেখেছি?
— বইতে। সংবাদপত্রের পাতায়!
— মানে? কে আপনি? কি নাম আপনার?
— নার্গিস। কুমিল্লার নাগির্স। তোমার কবির প্রথম প্রেমিকা, প্রথম স্ত্রী!
— হ্যাঁ। তাইতো। খুব চেনা-জানা মনে হচ্ছিল আপনাকে। কিন্তু আপনি এখানে কেন?
— চিরদিন কবির আশে-পাশে, বুকের গভীরে থাকার কি কথা ছিল না?
— ও ,হ্যাঁ তাইতো।
কথা বলতে বলতে আমরা এসে পড়ি “কবিভবনের” সামনে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি নার্গিস নেই। হওয়া হয়ে গেল কখন? ঢুকে পড়ি ভবনে। ভবন থেকে বের হলেই দেখি নার্গিস দাঁড়িয়ে আছেন আমারই সামনে।
— কবিকে দেখলে?
— না তো। কিছুতেই তো তিনি নেই। কেউ কিছু জানে না, বোঝে না। আমড়া গাছের চেয়ারে বসে আমলাগিরি করে সবাই!
— কবি নেই! নার্গিস হাহাকার করে ওঠে। আর্তনাদ করে।
— থাকলেই বা কী হত?
— তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন করতাম। বলতাম; কবি তুমি আমাকে গান শুনিয়ে ছিলে। বাঁশি শুনিয়ে পাগল করেছিলে। আমরা একে-অপরের প্রেমে পরেছিলাম। বিয়েও করেছিলাম। কিন্তু বাসর রাতে আমাকে অপেক্ষায় রেখে কেন তুমি পালালে? একজন নারী তার স্বপ্নের স্বামীর জন্য বাসর সাজিয়ে সারারাত অপেক্ষা করছে-কবি নয় মানুষ হিসাবে তোমার একটুও কি কষ্ট হয়নি? এটা কি আমার জন্য চরম অপমান, অবজ্ঞা, অবহেলা নয়? হাত-পা বেঁধে সাগরের পানিতে ফেলে দেয়া নয়?
— কবি আছেতো নার্গিস আপা।
— কোথায়?
— কবি ভবনে…. শামিম সিকদারের তৈরী কবির একটা ভাস্কর্যের মধ্যে!
#
ক্ষয়ে যাওয়া, শ্যাওলা পড়া ভাষ্কর্যটির বুকের সামনে কয়েকটি ছোট ছোট ফুটো। নার্গিস আপা অতি কষ্টে সেই সব ফুটো ভেদ করে ঢুকে পরে নজরুলের হৃদপিন্ড বরাবর। ভাষ্কর্যটি একটু কেঁপে উঠল যেন! যন্ত্রনায়?