১৮৯৯ ২৪ মে, ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬, বুধবার (মতান্তরে মঙ্গলবার) জন্ম। গ্রাম: চুরুলিয়া, থানা: জামুরিয়া, মহকুমা: আসানসোল, জেলা: বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ। ডাক নাম: দুখু মিয়া ও তারা খ্যাপা। পিতা: কাজি ফকির আহমদ (চুরুলিয়া জনৈক সুফি সাধকের মাজারের খাদেম ও উক্ত মাজারের নিয়ন্ত্রণাধীন মসজিদের ইমাম)। মাতা: জাহেদা খাতুন।
১৯০৮ পিতা কাজি ফকির আহমদের মৃত্যু।
১৯১০ গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পাশ। মসজিদে ইমামতি, মাজারের খাদেম।
১৯১১ বর্ধমানের মাথরুন গ্রামের ‘নবীনচন্দ্র ইন্সটিটিউটে”স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের তত্ত্বাবধানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়ন। স্থানীয় লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান, ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল) দলের জন্যে বাংলা-উর্দু-ফারসি-ইংরেজি মেশানো ভাষায় কবিগান-পাঁচালী-প্রহসন-নাটক ইত্যাদি রচনা। চাচা কাজী বজলে করিমের কাছে ফারসি ভাষা-সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ।
১৯১২ আসানসোলের একটি চা-রুটির দোকানে চাকরি।
১৯১৪ ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে ক্লাস সেভেনে ভর্তি এবং দরিরামপুরে বছরখানেক অবস্থান।
১৯১৫ সিয়ারসোল রাজ হাই স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন। কবিতা চর্চা শুরু।
১৯১৭ দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে নাম লেখান ৪৯ নম্বর বাঙ্গালি পল্টনে। নৌশেরার ট্রেনিং শেষে করাচিতে গমন। ব্যাটালিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পদে উন্নীত।
১৯১৮ মাসিক “সওগাত”(সম্পাদক-মো.নাসিরউদ্দিন) ও ত্রৈমাসিক “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা”( সম্পাদক-ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মো. মোজাম্মেল হক) প্রকাশিত।
১৯১৯ সাহিত্যে প্রথম প্রবেশ। করাচি থেকে গল্প প্রেরণ, “বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী”, সওগাত জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬ সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম প্রকাশিত কবিতা “মুক্তি”, “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায়” শ্রাবণ ১৩২৬, সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
১৯২০ দেশে প্রত্যাবর্তন-করাচি থেকে কলকাতায় এবং ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটের বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কলকাতায় অবস্থান-প্রথমে বাল্যবন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার মেসে। পরে কমরেড মুজাফফর আহমদের (১৮৯৯-১৯৭৩) সঙ্গে “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির”অফিসের একটি ঘরে। রাজনীতিবিদ শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হকের (১৮৭৩-১৯৬২) অর্থানুকূল্যে নজরুল ও মুজাফফর আহমদের যুগ্ম-সম্পাদনায় সান্ধ্য দৈনিক “নবযুগ”-এর আত্মপ্রকাশ। এই বছরই “নবযুগ”ছেড়ে দেওঘর ভ্রমণ। কবির গান রচনার শুরু এবং এ সময় থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর গান প্রকাশিত হতে থাকে।
১৯২১ এপ্রিল মাসে আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লার দৌলতপুরে গমন। দৌলতপুরে আলী আকবর খানের ভাগ্নি সৈয়দা খাতুনের (নজরুল প্রদত্ত নাম; নার্গিস, পুরো নাম: নার্গিস আসার খানম) সঙ্গে প্রণয়। ১৮ জুন বিয়ে। আলী আকবর খানের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ এবং দৌলতপুর ত্যাগ। নার্গিসের সঙ্গে একত্রবাস/বাসর রাত হয় নি। অক্টোবরে শান্তিনিকেতনে ভ্রমণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সঙ্গে সাক্ষাৎ। নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় গমন। ভারতে প্রিন্স অব ওয়েলস-এর আগমনে প্রতিবাদ ও হরতাল। কুমিল্লায় প্রতিবাদী মিছিলে স্বরচিত গান গেয়ে অংশগ্রহণ। কলকাতার ৩/৪-সি তালতলা লেনের চারতলা বাড়ির নিচের একটি ঘরে বছরের একেবারে শেষে রাত জেগে “বিদ্রোহী” কবিতা রচনা। প্রথম প্রবন্ধ “তুর্ক মহিলার ঘোমটা খোলা”সওগাত পত্রিকায় কার্তিক ১৩২৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ১৯২২ বছরের প্রথমেই “বিদ্রোহী”কবিতা ছাপার হরফে প্রকাশিত সাপ্তাহিক “বিজলি”(সম্পাদক: নলিনীকান্ত সরকার) ও “মোসলেম ভারত”পত্রিকায়। অনেকগুলি পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিত হলো। বিপুল আলোড়নের সৃষ্টি করলো এই কবিতা। “বিদ্রোহী কবি”অভিধাটি নজরুলের নামের সঙ্গে চিরকালের জন্যে যুক্ত হলো। প্রকাশিত হলো প্রথম গল্পগ্রন্হ “ব্যথার দান”, প্রথম কবিতাগ্রন্হ “অগ্নি-বীণা”, প্রথম প্রবন্ধগ্রন্হ “যুগ-বাণী”। ২৫ জুন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যু উপলক্ষে কবিতা ও গান রচনা, শোকসভায় স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন। নজরুলের সম্পাদনায় ১১ আগস্ট অর্ধ-সাপ্তহিক “ধুমকেতু”-র আত্মপ্রকাশ। ২৬ সেপ্টেম্বরের “ধুমকেতু” পত্রিকার দ্বাদশ সংখ্যায় প্রকাশিত “আনন্দময়ীর আগমনে”কবিতার জন্যে “ধুমকেতু”বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতার। যুগ-বাণী বাজেয়াপ্ত। রাজদ্রোহের অভিযোগে তাকে এ বছর দৈনিক “সেবক”(সম্পাদক: মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ) পত্রিকায় অল্প কিছু দিনের জন্যে কাজে যোগদান। “ব্যথার দান”গল্পগ্রন্হ, “অগ্নি-বীণা”কবিতার বই প্রকাশ। “যুগ-বাণী”প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশ এবং বাজেয়াপ্ত। ১৯৪৭ সালে এ আদেশ প্রত্যাহার।
১৯২৩ “দোলনচাঁপা” কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ। ৭ জানুয়ারি রচিত হলো “রাজবন্দির জবানবন্দি”। ১৬ জানুয়ারি এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত। প্রথমেই ১৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সি জেলেসহ বিভিন্ন জেলে অবস্থান করে ১৫ ডিসেম্বর মুর্সিদাবাদের বহরমপুর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। হুগলি জেলে কারারুদ্ধ থাকাকালে কয়েদিদের ওপর জেল কর্তৃপক্ষের অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , চিত্তরঞ্জন দাশ প্রমুখ মনীষী নজরুলকে অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ জানিয়ে টেলিগ্রাম ও পত্র প্রেরণ করেন। বিরজাসুন্দরী দেবীর অনুরোধে ৩৯ দিন পরে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন। কারামুক্তির পরে মেদিনীপুরে সংবর্ধনা। কলকতা থেকে “কল্লোল”(সম্পাদক-দীনেশরন্জন দাশ) প্রকাশিত-নজরুল এই ক্রান্তিকারী মাসিক সাহিত্যপত্রের নিয়মিত লেখক। ২২ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ তাঁর “বসন্ত”নাটকটি প্রথমবারের মতো উৎসর্গ করলেন নজরুলকে। “রাজবন্দীর জবানবন্দী”প্রবন্ধ ও দোলন-চাঁপা কবিতা প্রকাশ। ১৯২৪ “ছায়ানট”কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ। কুমিল্লার গিরিবালা দেবীর কন্যা আশালতা সেনগুপ্তা, ডাক নাম-দুলি (জন্ম: ২৭ বৈশাখ ১৩১৫ সাল, নজরুল প্রদত্ত নাম “প্রমিলা”)-র সঙ্গে বিয়ে ২৫ এপ্রিল। কলকাতায় হাওড়ায় বসবাস। প্রথম পুত্র আজাদ কামালের জন্ম-শৈশবেই অকালমৃত্যু। “বিষের বাঁশি”ও “ভাঙ্গার গান”প্রকাশের পরে-পরেই সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত। ১৯৪৫ সালে এ আদেশ প্রত্যাহার। গল্প “রিক্তের বেদন” প্রকাশ।
১৯২৫ “পুবের হাওয়া”, “চিত্তনামা” কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ ও “রিক্তের বেদন”গল্পগ্রন্হ প্রকাশ। “সাম্যবাদী”কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্মরণে “চিত্তনামা”প্রকাশ ও সাপ্তাহিক “লাঙ্গল পত্রিকা প্রকাশ, যা ১৫ এপ্রিল ১৯২৬ পর্যন্ত সচল ছিল। ফরিদপুরে কংগ্রেসের প্রাদেশিক সন্মেলনে তিনি যোগ দেন। এ সন্মেলনে গান্ধীজির সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। নজরুলের কণ্ঠে তার “চরকার গান”শুনে গান্ধীজি মুগ্ধ হন। অতঃপর কংগ্রেসের রাজনীতিতে নজরুল অংশগ্রহণ করেন। কংগ্রেসের অঙ্গ সংগঠন “মজুর স্বরাজ পার্টির”অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতার বই “ছায়ানট”, “চিত্তনামা”, “সাম্যবাদী প্রকাশ। “প্রলংকর”, “নমষ্কার” কবিতাদুটি সম্ভবত পুলিশ প্রেসে নষ্ট করে দেয়।
১৯২৬ “সর্বহারা”, ঝিঙেফুল”, “সাতভাই চম্পা”কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ। ১৩৯২৬-২৮, এই তিন বছর কৃষ্ণনগরে অবস্থান। ১২ আগস্ট থেকে “লাঙ্গল”পত্রিকাটি “গণবাণী”নামে প্রকাশিত হতে থাকে। চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর ও খুলনা সফর। দ্বিতীয় পুত্র অরিন্দম খালেদ (বুলবুল)-র জন্ম। গজল রচনার সূত্রপাত। প্রথম গজল “বাগিচায় বুলবুলি তুই”প্রকাশ। কালিকলম ও নবপর্যায়ে মাসিক সওগাত পত্রিকার সাথে যুক্ত। ২ এপ্রিল রাজরাজেশ্বরী মিছিলকে কেন্দ্র করে কলকাতায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা বাধলে এ বর্বরতার বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ এবং হিন্দু-মুসুলমানের মধ্যে সম্প্রীতি কামনা করে “লাঙ্গল”পত্রিকায় অগ্নিবর্ষী প্রবন্ধ, গান, ও কবিতা প্রকাশ। নভেম্বর মাসে ফরিদপুর থেকে বঙ্গীয় বিধান সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তমিজ্জুদ্দীন খানের কাছে পরাজিত হন। কবিতার বই “ঝিঙে ফুল”, “সর্বহারা” প্রকাশ। প্রবন্ধ “রুদ্র-মঙ্গল”, “দুর্দিনের যাত্রি”প্রকাশ এবং বাজেয়াপ্ত।
১৯২৭ “ফণী-মনসা”, “ সিন্ধু-হিন্দোল”কাব্যগ্রন্হ ও “বাঁধনহারা” উপন্যাস প্রকাশ। ফেব্রুয়ারি মাসে “মুসলিম সাহিত্য সমাজ”-র বার্ষিক অধিবেশনে আমন্ত্রিত হয়ে ঢাকা সফর। আবুল হোসেন সম্পাদিত “শিখা”, বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত “প্রগতি”, কবি বেনজীর আহমদের “নওরোজ”, মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ সম্পাদিত “মাসিক মোহাম্মদী”ইত্যাদি পত্রিকার নিয়মিত লেখক।
১৯২৮ “জিঞ্জির”কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ। ফেব্রুয়ারি মাসে “মুসলিম সাহিত্য সমাজ”-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে ঢাকায় আগমন। মিস ফজিলতুন্নেসা (১৮৯৯-১৯৭৭), উমা মৈত্র ও রানু সোমের (প্রতিভা বসু) সঙ্গে পরিচয়। গ্রামোফোন কোম্পানি ও বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। মাতার মৃত্যু। রংপুর ও রাজশাহী সফর। বর্মণ পাবলিশিং হাউস ও ডি.এম. লাইব্রেরী থেকে কবির কবিতাসংগ্রহ “সঞ্চিতা”-র দুটি স্বতন্ত্র সংস্করণ প্রকাশ। প্রথমটি উৎসর্গ করা হয় মিস ফজিলতুন্নেসা-কে, দ্বিতীয়টি রবীন্দ্রনাথ-কে। “বুলবুল গীতিগ্রন্হ ” প্রকাশিত এবং তার গজল গানগুলি লোকের মুখে-মুখে ফিরতে থাকে। কবি রচিত প্রথম ইসলামী গান “বাজলো কি রে ভোরের সানাই” ছাপার হরফে প্রকাশিত “মোয়াজ্জিন”পত্রিকায় কার্তিক ১৩৩৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
১৯২৯ “সন্ধা”, “চক্রবাক” কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ। জানুয়ারি মাসে দিনাজপুর সফর। বছরের প্রথমদিকে “বুলবুল সোসাইটি’-র পক্ষ থেকে মানপত্র প্রদান। চট্টগ্রাম এডুকেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সভাপতির অভিভাষণ। চট্টগ্রাম থেকে সন্দীপ সফর। ১৫ ডিসেম্বর, রবিবার কলকাতার এ্যালবার্ট হলে সমগ্র বাঙ্গালি জাতির পক্ষ থেকে “জাতীয় কবি”রূপে সংবর্ধনা। সভাপতি: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রধান বক্তা: সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭-১৯৪৫) । কবির তৃতীয় পুত্র কাজী সব্যসাচীর জন্ম (মৃত্যু-১৯৭৯)। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের “রক্তকমল”নাটকের গান রচনা ও প্রভূত জনপ্রিয়তা। নাটকটি নজরুলকেই উৎসর্গ করা হয়। মনোমোহন থিয়েটারে অভিনীত মণিলাল বন্দোপাধ্যায়ের “জাহাঙ্গীর”নাটকের সব গান নজরুলের। মন্মথ রায়ের “মহূয়া”নাটকের গান রচনা ও ব্যাপক লোকপ্রিয়তা।
১৯৩০ “প্রলয়-শিখা”কাব্যগ্রন্হ ও “মৃত্যুক্ষুধা”উপন্যাস, “ঝিলিমিলি”নাটক প্রকাশ। পুত্র বুলবুলের মৃত্যু (৭/৮ ই মে)। প্রলয়-শিখা বাজেয়াপ্ত ও এবং প্রত্যাহার ১৯৪৮ সালে। “মহুয়ার গান”প্রকাশ, “রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ (অনুবাদ কবিতা), “নজরুল গীতিকা”প্রকাশ।
১৯৩১ “কুহেলিকা”উপন্যাস, “আলেয়া”গীতিনাট্য ও “ শিউলিমালা”গল্পগ্রন্হ প্রকাশ। “চন্দ্রবিন্দু” গান প্রকাশ এবং বাজেয়াপ্ত। এ আদেশ ১৯৪৫ সালে প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৩২ ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এইচ.এম.ভি. গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে বাংলা ভাষার ইসলামী গানের প্রথম রেকর্ড “সুর-সাকী”, “জুলফিকার”,“বনগীতি”প্রকাশিত হয়। এই রেকর্ডে কবি-রচিত গান দুটি হলো “ ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে”ও “ইসলামের ঐ সওদা লয়ে”শিল্পী ছিলেন আব্বাসউদ্দিন আহমদ।
১৯৩৩ ৩ ডিসেম্বর পাইওনিয়ার কোম্পানির ফিল্ম ডিরেক্টর হিসাবে চুক্তিবদ্ধ। এইচ.এম.ভি. রেকর্ড কোম্পানির থেকে “পতুলের বিয়ে”নাটিকা প্রকাশিত। যোগেশ চৌধুরীর “মীরাবাঈ”রেকর্ড-নাট্যে নজরুল রচিত গান, “পুতুলের বিয়ে”, “গুলবাগিচা” প্রকাশিত হয়। “কাব্য আমপাড়া’(অনুবাদ) প্রকাশিত হয়।
১৯৩৪ “সুর-লিপি”(স্বরলিপি) ও “সুর-মুকুর”(স্বরলিপি), “গীতিশতদল”, “গানের মালা”ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। ১ জানুয়ারি নজরুল ও সত্যেন্দ্রনাথ দে পরিচালিত “ধ্রুব”ছায়াছবি কলকাতার ক্রাউন টকি হাউসে মুক্তিপ্রাপ্ত। এই চলচ্চিত্রে নারদের ভুমিকায় অভিনয় ও সঙ্গীত পরিচালক।
১৯৩৫ পাতালপুরী” ছায়াছবির জন্য গীত রচনা ও সঙ্গীত পরিচালনা। নজরুল রচিত “বিয়ে-বাড়ি”, “লাইলী মজনু”, “চন্ডীদাস”, “সুভদ্রা” নাটিকা প্রকাশিত ও নাটিকার জন্য গান রচনা। “মক্তব সাহিত্য” (পাঠ্যপুস্তক) প্রকাশিত হয়।
১৯৩৬ ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সন্মেলনে সভাপতিত্ব। এইচ.এম.ভি থেকে “বিদ্যাপতি”, “সুরথ উদ্ধার”, “নরমেধ”, “ঈদুল ফিতর”, “সর্বহারা”,“নন্দরানীর সংসার” রেকর্ড নাটিকা প্রকাশিত ও গান রচনা, সুর সংযোজন।
১৯৩৭ “গ্রহের ফের” ছায়াছবির গানে সুরারোপ ও সংগীত পরিচালনা। “সতি”, “বিল্বমঙ্গল” রেকর্ড নাটকের গীত রচনা ও সুর সংযোজন। কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সাথে যুক্ত-অসুস্থতার আগ পর্যন্ত।
১৯৩৮ নজরুল রচিত “দেবীস্তুতি” বেতারে প্রচার। নজরুলের কাহিনী অবলম্বনে ছায়াছবি“ বিদ্যাপতি” মুক্তিলাভ। এইচ.এম.ভি থেকে “জন্মাষ্টামী”, “সিরাজদ্দৌলা”, “বর্ণচোরা ঠাকুর” রেকর্ড নাটিকা প্রকাশিত ও গান রচনা, সুর সংযোজন। রবীন্দ্রনাথের “গোরা” ছায়াছবির সংগীত পরিচালনা। কবিতা “নির্ঝর” প্রকাশিত হয়। “বিদ্যাপতি” রেকর্ড নাট্য পুস্তিকা হিসাবে প্রকাশ।
১৯৩৯ প্রমীলা নজরুল পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। “সাপুড়ে” ছায়াছবির কাহিনী রচনা। “ মধুবালা” নাটক রচনা। এইচ.এম.ভি থেকে নজরুল রচিত “পুরোনো বলদ নতুন বউ”, “আল্লার রহম” নাটক দুটি প্রকাশিত। কবি রচিত “বিজয়া”, ও “হরপ্রিয়া” বেতারে সম্প্রচার। “ধ্রুব” ও “ সাপুড়ে” চলচ্চিত্রে রূপায়িত কাহিনীর সংক্ষিপ্তসার ও গানের পুস্তিকা হিসাবে প্রকাশ।
১৯৪০ এ বছরই বেতারে নজরুলের রচনা ও প্রযোজনায় “নবরাগ মালিকা” নামে নজরুল সৃষ্ট নতুন রাগ-রাগীণী সংবলিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার। বেতারের ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকীতে প্রচারিত হয় গীতিচিত্র “আকাশবাণী”। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা বেতার কেন্দ্রের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগদান।
“বনের বেদে” রেকর্ড নাট্য স্বতন্ত্র পুস্তিকা হিসাবে প্রকাশ। “শিউলিমালা” গান, “সুগোপন” বেতার নাটক লুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
১৯৪১ শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের উদ্যোগে পুনঃপ্রকাশিত দৈনিক “নবযুগ”-এর প্রধান সম্পাদক হিসাবে যোগদান। ৫ ও ৬ এপ্রিল “মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে” “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি”-র রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব। ২৫ মে কবি যতিন্দ্রমোহন বাগচীর সভাপতিত্বে নজরুলের জন্মোৎসব। তারাশংকরের “কালিন্দি” নাটকের গীত রচনা। এছাড়া, “বিলাতী ঘোড়ার বাচ্ছা”, “বাঙ্গালির ঘরে হিন্দি গান”, “হরপার্বতী”, “ব্ল্যাকআউট”, “নন্দিনী” নাটক ও ছায়াছবির জন্য গীত রচনা, সুর ও সংগীত পরিচালনা। ৭ অগাস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ। এই উপলক্ষে শোকসন্তপ্ত নজরুলের কবিতা, গান, রচনা এবং আকাশবাণী থেকে স্বকন্ঠে কবিতা ও সংগীত সম্প্রচার।
১৯৪২ হিন্দি “চৌরঙ্গী ছায়াছবিতে গীত রচনা। আগস্ট থেকে আকাশবাণী “নজরুল-গীতি” অভিধাটি দিয়ে সর্বপ্রথম নজরুলের গান প্রচার শুরু করে। এরপর ১০ অক্টোবর কবি অসুস্থ ও বাকশক্তিরহিত হয়ে পড়েন। অতঃপর যোগসাধনায় মনোনিবেশ। লুম্বিনী পার্ক ও রাঁচির মানসিক হাসপাতালে ব্যর্থ চিকিৎসা এবং সাহিত্য-সাধানার পরিসমাপ্তি ঘটে।
১৯৪৩ “দিকশুল” ছায়াছবিতে নজরুলের ২টি গান সংযোজন।
১৯৪৪ বুদ্ধুদেব বসু (১৯০৮-৭৪) সম্পাদিত “কবিতা” পত্রিকায় “নজরুল-সংখ্যা”(কার্তিক-পৌষ ১৬৫১, ১০:২) প্রকাশিত। ১৯৪৫ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক “জগত্তারিনী”স্বর্ণপদক প্রদান।
১৯৪৬ নজরুলের পরিবারের সদস্য তাঁর শাশুড়ি গিরিবালা দেবী নিরুদ্দেশ।
১৯৪৯ কবি সম্পর্কিত প্রথম গ্রন্হ কাজি আবদুল ওদুদ-এর “নজরুল-প্রতিভা”কলকাতা থেকে প্রকাশিত।
১৯৫৩ ইংল্যান্ড ও জার্মানীতে ব্যর্থ চিকিৎসা। ১০ মে বিদেশে গমন ও ১৫ ডিসেম্বর দেশে প্রত্যাবর্তন।
১৯৬০ ভারত সরকার কর্তৃক “পদ্মভূষণ”উপাধি দান।
১৯৬২ ৩০ জুন কবিপত্নি প্রমীলা নজরুলের মৃত্যু।
১৯৬৬ নজরুল রচনাবলী প্রথম খণ্ড প্রকাশিত।
১৯৬৯ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডি.লিট. উপাধি দান।
১৯৭২ ২৪ মে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ উমা কাজি ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনসহ কবি বাংলাদেশে আনীত। ধানমন্ডিস্থ “কবিভবনে”-এ অবস্থান।
১৯৭৪ ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কবিসহ আরো কয়েকজনকে সন্মানসূচক ডি.লিট. উপাধি প্রদান। কিন্তু নজরুলানুরাগীদের পক্ষ থেকে কবিকে পৃথকভাবে এই সম্মাননা প্রদানের জন্য দাবি জানানো হয়। এ কারণে ঐদিন কবি এ সন্মাননা গ্রহণ করেন নি।
১৯৭৫ নজরুলানুরাগীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি কবিকে এককভাবে বঙ্গভবনে নিয়ে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মানসূচক ডি.লিট.-এর সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। কবিকে ২২ জুলাই “কবিভবন”থেকে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
১৯৭৬ জানুয়ারি মাসে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সন্মান জানান বাংলাদেশ সরকার। ঐ বছরই কবিকে “একুশে পদক”-এ ভূষিত করা হয়। ২৫ মে কবিকে সেনাবাহিনীর “আর্মি ক্রেস্ট”উপহার দেয়া হয়। ২৯ আগস্ট, ১২ ভাদ্র ১৩৮৩, রোববার পিজি হাসপাতালের ১১৭ নং কেবিনে কবি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সেদিনই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবিকে সমাহিত করা হয়।