প্রায় একযুগ আগে ঢাকার রাস্তায় দ্বিতল ভলভো বাস চলতো। সরকারি বাস। সেই বাস দেখে মনে হতো, ছোটবেলায় বইয়ে আঁকা সিংহ হেলেদুলে আসছে! বাসের ভিতর বসে কী যে আরাম! মনে হতো, বড় একটা নৌকায় উঠছি, যেন বিলের মধ্যে ধীরে চলছে নৌকা, আর এপাশ-ওপাশ দোলনার মতো একটু-একটু দুলছে। অথচ বাস তখন চলছে দ্রুতবেগে! তখন ভাবতাম, দেখ! আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে! এখন আমরা পৃথিবীর অন্যতম আরামদায়ক বাসে চড়ছি, তা-ও আবার শহরের রাস্তায়। আমাদের আর পিছন ফিরে তাকানোর সময় নেই! আর মাত্র বছর কয়েক, তারপর দেখো, আমরা আরো ভালো ব্যবস্থায় থাকবো!
বছর ঘুরতেই বাসের সংখ্যা কমে গেল, আর এক বছর ঘুরতেই ঢাকার রাস্তায় ভলভো নাই! কারণ কী, ভাই? লোকমুখে শুনি ওসব না-কি রাজনীতির দুষ্টচক্র! নবম শ্রেণির অর্থনীতির বইয়ে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র পড়েছিলাম। আমি ধারণা করে নিলাম, রাজনীতির দুষ্টচক্র তার কাছাকাছি কিছু একটা হবে। এই চক্র না-কি বাস কেনে, পার্টস কেনে না। বাস ডিপো থেকে পার্টস চুরি হয় কেউ দেখে না। তেলের খরচ বেড়ে যায়, বাসের শরীর থেকে একটা-একটা অঙ্গ যায়, কেউ দেখে না। আমরা জনগণ আদার ব্যাপারী, ওসব জাহাজের খবর রাখি না।
তারপর আরো কত বাস এলো, গেল। সে ইতিহাসের পরিবর্তন হলো না। আজও সরকারি বাসে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। কর্মীদের বেতন হয় না। শত-শত বাস কেনা হয়, শত-শত বাস নষ্ট হয়ে ডিপোতে কালের সাক্ষী হয়ে ঝাঁজরা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সরকারি পরিবহণেব টিকেট মেলে না, যাত্রীর ভিড়ে পা রাখার জায়গা থাকে না, তবু সরকারি পরিবহণ লাভের মুখ দেখে না। আমরা প্রাণপণে সেসব গল্প ভুলে যেতে চেষ্ট করি।
হাজার-হাজার বেসরকারি কোম্পানি এদেশে বাসের ব্যবসা করে প্রতিদিন লাভবান হয়। লক্ষ-লক্ষ পরিবার পরিবহণ ব্যবসার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। তাদের দেখে আমরাও সুদিনের আশায় বুক বাঁধি! নিশ্চয়ই একদিন আমাদের সরকারি পরিবহণ ব্যবসা ভালো করবো। আমাদের জন্য আরো ভালো পরিবহণ আনবো।