গত সংখ্যার পর
বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে সামাজিক, ধর্মীয়, নৈতিক বা আইনি কারণে আপত্তিজনক মনে করা হয়। ঐতিহাসিক ভাবে, বেশির ভাগ সংস্কৃতিতে একে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একরৈখিক কোনো সিদ্ধান্ত টেনে দিতে চান না। বিবর্তনের ধারায় পুরুষের যৌন জেলাসি কিংবা মেয়েদের ইমোশনাল জেলাসি প্রমাণ করে আদিমকাল থেকেই সম্পর্কে প্রতারনা ছিল। মার্টিন ডালি এবং মার্গো উইলসন বলেন, ইতিহাসের একটা বড় সময় জুড়ে মানব সমাজে একগামী বলে কিছু ছিলো না। সেই সময় পুরুষরা ছিলো বহুগামী। মানব সমাজ ছিলো পলিজাইনাস। শক্তিশালী আর ক্ষমতাধর পুরুষেরা একাধিক নারীর দখল নিত। নারীর দখল নেওয়ার জন্য পুরুষে পুরুষে শক্তির প্রতিযোগিতায় নামতো, রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের মাধ্যমে সেই প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটত। পুরুষেরা খাদ্যাহরণ আর লড়াই করত মূলত নারীদের আকর্ষণ করতে। যারা সম্পদাহরণ ও শক্তি প্রদর্শনে ছিল শ্রেষ্ঠ তারাই দখল নিতে পারতো একাধিক নারীর। তাছাড়া জননেন্দ্রিয়ের গঠনের কারণে মহিলাদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং গর্ভকালে অতিরিক্ত বিনিয়েগের যেমন প্রয়োজন পড়ে তেমনি ভাবে সন্তান জন্মের পর বাচ্চার লালন পালনের ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ থাকে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে তা থাকে না। তাদের অভিভাবকিয় বিনিয়োগের ঝুঁকি কম হওয়ায় তারা প্রজননগত উপযোগিতা বেশি পায়। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত জুটি কপুলেশনের প্রবণতা দেখা যায়। একটি বিশেষ সম্পর্কের বাইরে গিয়ে তারা অন্য সঙ্গীর মাধ্যমে তাদের প্রজনন সাফল্য ধরে রাখার চেষ্টা করে আর এতে তারা কম বিনিয়োগে অধিক সাফল্য পায়। বিনিয়োগের কম ঝুঁকি থাকার কারণে পুরুষের পক্ষে বহুগামীতা বিবর্তনীয়ভাবে অভিযোজিত। ডারউইনীয় ধারার ইতিহাসবিদ লরা এল বেটজিগ। তিনি বহুদিন ধরে প্রভাবশালী পুরুষের বহুগামীতার বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ইতিহাসে প্রভাবশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা তাদের বৈধ সম্পর্কের বাইরে গিয়ে সব সময়ই অন্য নারীদের দখল নিয়েছে এবং তাদের গর্ভে সন্তান জন্ম দিয়েছে। ইতিহাসের রাজা বাদশাদের জীবন-কাহিনী পড়লেই এই সত্যতার হদিস মিলবে। এর অর্থ হলো ক্ষমতাশালী পুরুষেরা তাদের প্রজননগত সফলতার জন্য নারীর ওপর দখলদারিত্ব আরোপ করেছিল। একাধিক স্ত্রী রাখার মধ্য দিয়েও পুরুষের প্রজনন সফলতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়। একটা সময় পুরুষ যুদ্ধে বা লড়াইয়ে লিপ্ত হতো নারীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে। এখন তারা সম্পদ আহরণের জন্য, কেরিয়ারের জন্য প্রায় প্রাণপাত করে। এর কারণ তারা সম্পদ, যশ ও প্রতিপত্তির মাধ্যমে অধিক সংখ্যক নারীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে থাকে। আর একারণে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অর্থ প্রতিপত্তি আর ক্ষমতাধর পুরুষেরাই পরকীয়ায় বেশি আসক্ত হন।
এদিকে নারী পুরুষের মধ্যকার চাহিদার পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে তাদের যৌনতা বিষয়ক ফেন্টাসি কেন্দ্রিক গবেষণাগুলোতেও। এ বিষয়ে ব্রুকস এলিস ও ডন সিমেন্স একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তাদের করা ইউনিভার্সিটি অব ক্যলিফোর্নিয়ার গবেষণায় বলা হয়েছে যে, নারী পুরুষের মধ্যকার যৌনতার ফেন্টাসিগুলো যদি সততার সঙ্গে লিপিবদ্ধ করা হয় তবে দেখা যাবে যে, এদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ একাধিক নারীর সঙ্গে যৌনতার ফ্যান্টাসিতে ভোগে। তারা সারা জীবনে তাদের পার্টনারের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন কল্পনা করে আমোদ অনুভব করে। এলিস ও সিমেন্স তাদের গবেষণা পত্রে বলেন, ‘পুরুষদের যৌনতার বাঁধনহারা কল্পনাগুলো হয়ে থাকে সর্বব্যপী, স্বতস্ফুর্ত দৃষ্টিনির্ভর, বিশেষভাবে যৌনতা কেন্দ্রিক, নির্বিচারী, বহুগামী ও সক্রিয়।’
এদিকে পুরুষের যৌন জেলাসি প্রমাণ করে নারীরা পুরুষের মতো প্রজননগত উপযোগিতা না পেলেও বহুগামী হতে পারে। আমরা দেখেছি ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী পুরুষের স্ট্যাটাস নারীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে কোনো নারী তার বর্তমান সঙ্গীর চেয়ে যদি তার প্রেমিকের পদমর্যাদা ও স্ট্যাটাস ভালো হয় তখনই সে সঙ্গী বদলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর কারণ নারীটিও চায় তার নিজের জন্য, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সুস্থ, সবল, স্বাস্থ্যবান পুরুষের স্পার্ম। অতএব দুর্বল সঙ্গীকে নারী সব সময়ই অপছন্দ করে থাকে। সম্পর্ক শর্ট-টার্ম বা লং-টার্ম যা-ই হোক না কেন তার জিনই তাকে তার অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকার প্রশ্নে তাকে ধাবিত করে অন্য পুরুষের দিকে। যতই হাস্যকর মনে হোক না কেন, মানুষকে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে শত ভাগ সময় ব্যয় করতে হয়েছে। বিনোদনের সময় তার ছিল না। ফলে দীর্ঘ দিনের এই যৌন অভ্যাস মানুষের মনোজগতকে এখনো প্রভাবিত করছে তার জিন। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শিম্পাঞ্জির মধ্যে নারীরা খাদ্যের যোগানদাতা পুরুষ শিম্পাঞ্জির ক্ষেত্রে যৌনতার ব্যাপারে খুবই উদার। সম্পদের যোগানের সঙ্গে নারীর যৌনতা প্রদানের একটি অলিখিত সম্পর্ক আছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে আধুনিক সমাজেও নারীরা তার স্বামীর কাছ থেকে উপহার পেতে পছন্দ করে। আবার যে ব্যক্তি স্বামীর চেয়ে বেশি উপহার বা দামী উপহার দিতে পারে নারীরা স্বভাবতই তার প্রতি আসক্ত হয়। এই আসক্তিকে সমাজ ছি ছি করলেও এটা সে জিনগত ভাবেই পেয়েছে। একদা তাকে লড়াই করতে হয়েছে খাদ্য স্বল্পতার বিরুদ্ধে। নারীর গর্ভাবস্থায় এই লড়াই হয়ে পড়েছে নিদারুণ কষ্টের। এই কষ্টের সময় যে পুরুষ খাদ্য উপহার হিসেবে তাকে দিয়েছে তাকে সে কৃতজ্ঞতার পুরস্কার হিসেবে যৌনতা প্রদান করেছে। শিম্পাঞ্জির মধ্যে এই চুক্তি অলিখিত ভাবেই সম্পন্ন হয়। বিজ্ঞানীরা আমাজানের মেহিনাকু ও ট্রোবিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে, সেখানেও পুরুষেরা নারীদের জন্য রকমারি খাবার, বাদাম , শঙ্খের মালা, বাহুবন্ধনী ইত্যাদি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। আর এসবের বিনিময়ে নারীরা তাদের যৌনতার অধিকার বিনিময় করে। যখন কোনো পুরুষের কাছ থেকে এসব উপহারের যোগান বন্ধ হয়ে যায় তখন নারীরাও সেই সমস্ত পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ইতি টেনে দেয়। আমেরিকায় সাধারণ মেয়েদের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যে সমস্ত মেয়েরা শর্ট-টার্ম সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছুক তারা আশা করে তাদের প্রেমিকেরা কৃপণ হবে না। তারা তাদের জন্য দামী উপহার নিয়ে আসবে, ভালো ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়াবে এবং সম্পদের বিনিয়োগে থাকবে উদার। কৃপণ স্বামীকে মেনে নিলেও পরকীয়ার ক্ষেত্রে কৃপণ প্রেমিককে কিছুতেই মেনে নেয় না মেয়েরা। নারীদের এই অভিরুচি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারীদের ক্ষেত্রে এটি একধরনের অভিযোজন জনিত উপযোগিতা দিয়েছে। আর অনেক সময় নারীরা এটা পরকীয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চায়।
তবে নারীরা পরকিয়ার ক্ষেত্রেও বোহেমিয়ান বা বহুগামী পুরুষকে কখনোই সহ্য করে না। এলিস ও সিমেন্সের গবেষণায় দেখা গেছে, যৌনতার ফেন্টাসিতে নারীরাও ভোগে। কিন্তু তাদের যৌনতার ফ্যান্টাসিগুলো তাদের নিজেদের যৌনসঙ্গীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এলিস ও সিমেন্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ব্যক্তিদের অর্ধেক নারীই অভিমত দিয়েছে যে, যৌনতা নিয়ে কল্পনার উন্মাতাল সময়গুলোতে তারা কখনো সঙ্গী বদলের কথা চিন্তা করে না। আর এরকম ভাবনা পুরুষের ক্ষেত্রে মাত্র ১২%। তাই তারা বহুগামী পুরুষের কাছ থেকে শত হস্ত দূরে থাকে। কারণ- এটি তাদের কাছে সংকেত দেয় যে, সে যে কোনো সময় তার ও তার সন্তানের ভবিষ্যতের যোগান বন্ধ করে দেবে। আর এটা মোটেও তার জন্য সুখকর নয়। নারী একই সময় একাধিক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয় না। স্বামী বা বর্তমান সঙ্গী তার সঙ্গে থাকলেও সে যদি নতুন সম্পর্কে জড়ায় তা হলে সে বর্তমান সম্পর্ককে অস্বীকার করবেই। এটিও সে জিনগত ভাবেই পেয়েছে। কেননা সে একই সময় একজনের স্পার্ম গ্রহণ করে এবং সেই স্পার্ম থেকে সৃষ্ট সন্তানকে সে পরম যত্নে লালন করে। দৈহিক এই বৈশিষ্ট্যের জন্যেই সে অবিশ্বস্ত পুরুষকে সহ্য করে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে নতুন সঙ্গীর সঙ্গে অপরিকল্পিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নারীরা এক সময় তার সেই প্রেমিককে স্বামী হিসেবে মূল্যায়ণ করতে শুরু করে। আর সেই কারণে স্বল্প মেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নারীরা প্রতারণা, অবিশ্বস্ততা একেবারেই মেনে নিতে চায় না। কারণ অবচেতনে তাদের মনে থাকে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সঙ্গীর মধ্যে যদি বহুগামীতা বা অতীতে কোনো নারীর প্রতি আসক্তির বিষয় নিশ্চিত হয় তাহলে সে ধরে নেয় ‘ভবিষ্যৎ স্বামী’ হিসেবে সে উপযুক্ত নয়। অর্থৎ নারী তার যৌন সঙ্গীর মধ্যে ভবিষ্যৎ স্বামীর বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে পেতে চায়। এই আগ্রহ নিছক যৌন আনন্দ পাওয়ার জন্য নয় বরং তা নিজের জিনকে আরো বেশি উন্নত ও নিরোগ করে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাত। তাই উভয় ক্ষেত্রেই নারীরা চায় তার পুরুষ সঙ্গী হবে দয়ালু, রোমান্টিক, স্বাস্থ্যবান, রসিক, বিশ্বস্ত এবং সম্পদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদার। আর সে কারণেই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ডেভিড বাস তার The Evolution Of Desire-বইয়ে বলেন, উভয় ক্ষেত্রে মেয়েদের অভিরুচির এই অপরিবর্তনীয়তা ইঙ্গিত করে যে, নারীরা অনিয়মিত যৌন সঙ্গীকে হবু স্বামী হিসেবেই দেখে এবং সেই জন্যে দুটি ক্ষেত্রেই বেশি পদমর্যাদা আরোপ করে থাকে।
সাভানা বেবুনদের নিয়ে গবেষণা করেন বিজ্ঞানী বারবারা স্মুটস। তিনি দেখেছেন, মূল সঙ্গী বাইরে থাকলে নারী বেবুনের দুজন সঙ্গীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সঙ্গীরা নারী বেবুনটিকে অন্যদের সহিংসতা থেকে রক্ষা করে, বাচ্চাদের নিরাপত্তা দেয় ও তাদের খাদ্যের যোগান দেয়। মানুষের ক্ষেত্রেও এই রকম সম্পর্ক হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক তার ও তার সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এভাবে নারীটি অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিজের ও নিজের সঙ্গীর জিনকে রক্ষার ক্ষেত্রে একধরনের স্ট্রাটেজি তৈরি করে। বিজ্ঞানী রবার্ট স্মীথও এই স্ট্রাটেজি সম্পর্কে বলেন, সমাজের সহিংসতার হাত থেকে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নারীরা বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কথা চিন্তা করে থাকে। নারীর পরকীয়া এবং বহুগামীতার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হাইপোথিসিস প্রস্তাব করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে রয়েছে রিসোর্স হাইপোথিসিস, জেনেটিক হাইপোথিসিস, মেট সুইচিং হাইপোথিসিস, মেট ম্যানুপুলেশন হাইপোথিসিস ইত্যাদি। মেট সুইচিং বা সঙ্গী রদবদল করার প্রবণতা থেকে নারীও জড়াতে পারে পরকীয়ায়। জীব বিজ্ঞানী মার্ক কলওয়েল ও লিউসি ওরিং স্পটেড স্যান্ড পাইপার নামক একধরনের পাখিদের জীবনাচরণ অনুসন্ধান করেন। তারা দেখেন নারী স্পটেড স্যান্ড পাইপার সঙ্গী রদবদলের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গীর চেয়ে আরো আকর্ষণীয় সঙ্গী খুঁজে নেয়। মানব সমাজেও নারীদের মধ্যে এরকম অভিরুচি থাকা অসম্ভব নয়। বর্তমান সঙ্গীর চেয়ে আকর্ষণীয়, সুদর্শন এবং উচু পদমর্যাদার কেউ যদি তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় তা হলে নারী তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়াতে পারে। বর্তমান সঙ্গী অসুস্থ, পঙ্গু অক্ষম হলে নারী পরকীয়ায় জড়াতে পারে। ভালো জিন পাওয়ার প্রত্যাশা থেকে সঙ্গী রদবদলের ব্যাপারে আদিম শিকারী সংগ্রাহক সমাজের নারীদের একধরনের স্ট্রাটেজি তৈরি করেছিল। বিজ্ঞানী থর্ণহিলের ‘ভালো জিনের’ হাইপোথিসিস থেকেও এই প্রবণতার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে নারীরা যখন পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে তখন তারা তাদের স্বামীর চেয়ে সুদর্শন পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয় অর্থাৎ প্রতিসম চেহারাকে বেশি গুরুত্বদেয়। এই ধরনের চেহারা ভালো ফিটনেস মার্কার হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ ভালো জিনের বাহক হিসেবে সেই পুরুষ তার কাছে হয়ে ওঠে আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু। ভালো জিনের জন্য প্রলুব্ধ হয়ে নারী যে সম্পর্কের পিছনে ছুটছে একে বলে পরকীয়ার জেনেটিক হাইপোথিসিস। এটি সেক্সি সন বা জোশিপোলা অনুকল্প বা হাইপোথিসিস নামেও পরিচিত। এটি ১৯৭৯ সালে কুইন বিশ্ববিদ্যাালয়ের জীব বিজ্ঞানী প্যাট্রিক ওয়েদারহেড এবং রালি রবার্টসন প্রস্তাব করেন। এই অনুকল্প অনুযায়ী ধারণা করা হয় যে, নারীরা সুদর্শন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় একারণে যে তাদের মস্তিষ্ক তাকে দিয়ে নিজের জিনকে আরো উন্নত করার জন্য প্রলুব্ধ করে। এটা সে অবচেতনেই করে থাকে। বেশ কিছু জরিপে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রখ্যাত নৃতত্ববিদ সারা ব্লাফার হার্ডি মনে করেন, নারীর পরকীয়ার বিষয়টি মানবেতিহাসের সূচনা থেকে এমন ভাবে জড়িত ছিল যে একে অস্বীকার করা বোকামি।
এদিকে প্রাণী দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গঠন যৌনতার ক্ষেত্রে কি ধরনের উপযোগিতা দিয়েছে তা নিয়ে গবেষণা চালান একদল বিজ্ঞানী। গবেষকগণ দেখেছেন প্রাণী দেহের জনন অঙ্গ তার সঙ্গীর অভিরুচির ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে। তারা শিম্পাঞ্জী ও এক দল গরিলার ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে, শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে নারীরা বহুগামী হয়। তারা একই দিনে একাধিক পুরুষ শিম্পাঞ্জীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এই একাধিক পুরুষ শিম্পাঞ্জীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে নারী শিম্পাঞ্জী মূলত জেনেটিক ভাবে শক্ত সমর্থ পুরুষের কাছ থেকে স্পার্ম পেতে চায় এবং নিজের ডিম্বানুর সঙ্গে নিষেক ঘটাতে চায়। নারী শিম্পাঞ্জীর এই অভিরুচির কারণে, পুরুষ শিম্পাঞ্জীর জন্য নিজের জিনকে টিকিয়ে রাখার কাজটি হয়ে ওঠে একেবারে প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এ কারণে পুরুষ শিম্পাঞ্জীরা একধরণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। আর এই প্রতিযোগিতা চলে নিজের লিঙ্গের শিম্পাঞ্জীর সঙ্গে যাকে বলা হয় স্পার্ম কম্পিটিশন।। এই প্রতিযোগিতায় সেই শিম্পাঞ্জী টিকে যায় যে কি না প্রচুর শুক্রের যোগান দিতে সক্ষম হয়। আর এই কারণে শিম্পাঞ্জীর শুক্রাশয়ের আকার অপেক্ষাকৃত বড় হয়। বিজ্ঞানীরা জানান শিম্পাঞ্জী সমাজে বড়, ছোট ও মাঝারি আকারের শুক্রাশয় ছিল কিন্তু নারী শিম্পাঞ্জীর অভিরুচির কারণে কেবল বড় শুক্রাশয়ের শিম্পাঞ্জীরা টিকে আছে।
অন্য দিকে নারী গরিলা বহুগামী নয়। কেবল পুরুষ গরিলাই বহুগামী হয়। তাই শক্তিশালী পুরুষ গরিলা অধিক নারীর দখল নিয়ে হারেম তৈরির জন্য মনোযোগ দেয়। পুরুষ গরিলার লড়াই বীর্যে লড়াই নয়। পুরুষে পুরুষে শক্তির লড়াই। তাই তাদের বৃহৎ শুক্রাশয় গঠনের কোনো উপযোগিতা নেই। তার বদলে তাদের রয়েছে দেহ গঠনের দিকে ঝোঁক। তা হলে দেখা যাচ্ছে প্রাণীকুলে নারী পুরুষের যৌন অভিরুচির কারণেই গড়ে ওঠে তাদের সামাজিক সম্পর্কের ধরন। তা হলে মানুষের ক্ষেত্রে সেই ধরনটি কেমন হবে? বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাশয়ের অবস্থান গরিলা আর শিম্পাঞ্জীর মাঝামাঝি। তবে অধিকাংশ গবেষকই রায় দিয়েছেন যে, মানুষের শুক্রাশয়ের গতিপ্রকৃতি কিছুটা শিম্পাঞ্জীর দিকেই ঝুঁকে আছে। পুরুষের শুক্রাশয়ের আকার যেহেতু গরিলার মতো ছোট নয় তাই ধরে নেওয়া যায় মানব সমাজে নারীরা শতভাগ একগামী ছিল না। আবার যেহেতু শিম্পাঞ্জীর মতো মানুষের শুক্রাশয় অত বড়ও নয় অতএব ধরে নেওয়া হয় মানব সমাজে নারী শতভাগ বহুগামীও ছিল না। তবে মানুষের মধ্যে একগামীতাও আছে, আছে বহুগামীতার ঝোঁকও। এজন্য মানব সমাজে গরিলার মতো হারেম তৈরির ব্যাপার যেমন আছে তেমনি আছে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে একগামীতা চর্চার চেষ্টাও। তবে বিজ্ঞানী জেয়ান এলিসন রজার্স তার Sex: A Natural History বইয়ে বলেন, ‘পুরুষের অপেক্ষাকৃত বড় শুক্রাশয় এটাই ইঙ্গিত করে যে, নারীরা বিবর্তনের ইতিহাস পরিক্রমায় একগামী নয় বরং বহুগামী ছিল।
এদিকে শরীর বিজ্ঞানী গর্ডন জি গ্যালোপ The Human penis as a semen displacement device শিরোনামে একটি গবেষণা পত্র তৈরি করেন। সেখানে গবেষকদল দেখিয়েছেন যে, অন্য প্রাইমেটদের মানুষের পুরুষাঙ্গের গঠন একেবারেই আলাদা। অন্য প্রাণীদের মতো ব্যাকালাম নামের হাড় এখানে নেই। এছাড়া পুরুষঅঙ্গের অগ্রভাগ সুঁচালো কিন্তু কীলকাকৃতির। লিঙ্গের অগ্রভাগের ব্যাস তার স্তম্ভের ব্যাসের চেয়ে খানিকটা বড়। তাছাড়া পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগও এর স্তম্ভের সাধারন তলে আছে করোনাল রিজ। যা থাকে স্তম্ভের সঙ্গে উলম্ব ভাবে। কাজেই সঙ্গমের সময় যোনিতে অঙ্গ সঞ্চালনের প্রক্রিয়া এটা প্রমাণ করে যে, নারীর যোনিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য পুরুষের শুক্রাণু বিতারণ করার এটা একটা কৌশল মাত্র। আবার গবেষকগণ দম্পতিদের দীর্ঘদিন আলাদা করে রেখে তারপর সহবাসের সুযোগ করে দেখেছেন যে এতে পুরুষের বীর্য পাতের হার নাটকীয় ভাবে বেড়ে গেছে। নিয়মিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে এই প্রক্ষিপ্ত শুক্রানু যদি হয় ৩৮০ মিলিয়ন তা হলে অনিয়মিতদের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১২ মিলিয়ন। এর কারণ পুরুষটি ভেবে নেয় তার সঙ্গী এই বিচ্ছেদের সময় অপর কোনো সঙ্গীর সান্নিধ্যে এসে থাকতে পারে। আর এই কারণে সে এক ধরনের স্পার্ম কম্পিটিশনে অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে সে নিক্ষিপ্ত করে প্রচুর শুক্রানু আর দাবী করে নিজের জিন টিকিয়ে রাখার কাঙ্ক্ষিত নিশ্চয়তা।
মেক্সিকান চিত্রকর, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নারী দেহকে বিভিন্নভাবে চিত্রিত করে নারী দেহের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন এবং এবিষয়ে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবী করছেন তিনি মারিয়া কোনিজা। তিনি বলেন, ‘তথ্য হলো শক্তি’ আর ‘লজ্জা বিপজ্জনক’। মারিয়া কোনিজা এবং সাংবাদিক মারিয়া মেলডেনসন নারীর শরীর সংক্রান্ত বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের যোগানদাতা হিসেবে কাজ করছেন। এখনও বিজ্ঞানীরা নারীর শরীরের যৌনানুভূতির জটিল প্রক্রিয়ার রহস্য পুরোপুরি ভেদ করতে পারেননি। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষের অর্গাজম যেখানে ইজাকুলেশনের সঙ্গে সরল ভাবে জড়িত নরীর ক্ষেত্রে তা নয়। নারীদের কয়েক ধরনের অর্গাজম হতে পারে। বিজ্ঞানীরা নারীদের দু ধরনের অর্গাজমের কথা বলে থাকেন। নারীর অর্গাজমের সঙ্গে ফিমেল ইজাকুলেশন বা স্কোয়েটিং বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এসবের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে তার গভীর অনুভূতির অভিজ্ঞতা। কিন্তু নারীদের বেশ বড় অংশই এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়। মারিয়া মেলডেনসন বলেন, ‘কারণ আমরা এমন এক জগতে বাস করছি যেখানে নারী দেহ ও যৌনতা নিয়ে ব্যাপক বৈষম্য ও গোপনীয়তা রয়েছে। ’ আর এজন্যই কন্ডোম প্রস্তুত কারক ব্রান্ড ডিউরেক্স পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৭০% নারী অর্গজম থেকে বঞ্চিত হন। এক সময় বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ এবং বিবর্তন বিজ্ঞানী জে গুল্ড মনে করতেন নারীর চরম পুলক বা অর্গাজমের কোনো উপযোগিতা নেই। এটা বিবর্তনের সাইড এফেক্ট। তিনি একে বলেন স্পেন্ড্রেল। এটাকে স্রেফ বিবর্তনের উপজাত হিসেবে মনে করেছেন তিনি। আজো সমাজের গভীরে সেই চিন্তাটাই কাজ করে যাচ্ছে ফলে পুরুষ প্রধান সমাজ নারীর অর্গাজমকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। পুরুষের সাথে অর্গাজমের বিষয়টি সরাসরি প্রজননের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিবর্তনের জন্য এর উপযোগিতা সহজেই দৃশ্যমান হয়েছে। নারীর ক্ষেত্রে তা হয়নি কেননা অর্গাজমের সঙ্গে নারীর গর্ভধারনের কোনো সম্পর্ক নেই।
গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ১৫% নারী সব সময়ই অর্গাজমের স্বাদ পান। ৭% কখনোই অর্গাজমের নাগাল পান না। বাকিরা মাঝে মাঝে পান। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে, সকল প্রাইমেট নারীর মধ্যে অর্গাজম বা চরম পুলকের অস্তিত্ব রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এ প্রক্রিয়ায় নারীরা তাদের অজান্তেই পুরুষের সঙ্গে বীর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং এই জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সে তার ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য সঠিক জিনের সন্ধান করে বা সঠিক পুরষটি খুঁজে নেয় আর এ কারণে সন্তুষ্ট না হওয়া অবধি সে সঙ্গী বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।
নারীর চরম পুলকের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রত হয়, হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বাড়তে থাকে, মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ হয়, পেশি সংকোচন হয় বা খিচুনির অবস্থা হয়, কেউ কেউ হ্যালুসিনেট করে। নারী তার ভিতর চলা এই জটিল ও মায়াবী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার জন্য সঠিক মানুষটিকে নির্বাচন করে। বিজ্ঞান লেখিকা ন্যাটালি এঞ্জিয়ার বলেন,‘ নারীর পুলক হচ্ছে অভিরুচি বাস্তবায়নের এক চুড়ান্ত অভিব্যক্তি… এটা নারীর মতো করে গোপন বিতর্কের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে তুলে নেওয়ার একটি সচেতন প্রক্রিয়া।’ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, নারী অর্গাজম হলে যে পরিমান শুক্রানু ধারণ করে তার চেয়ে কম ধারণ করে অর্গাজম না হলে। বিজ্ঞানীরা বলেন, অর্গাজমের সময় নারীর জরায়ুসহ মাংসপেশিতে অবিরাম সংকোচন ঘটে। এর ফলে সে জরায়ুর সার্ভইকাল মিউকাস বেরিয়ার অতিক্রম করে শুক্রানুকে নিজদেহাভ্যন্তরে টেনে নিতে পারে। সন্দেহ নাই অর্গাজমের লক্ষ্য শুক্রানুকে যতটা সম্ভব ডিম্বানুর কাছাকাছি পৌছে দেওয়া। স্বাভাবিক অবস্থায় নারী সঙ্গমের পর ৩৫% স্পার্ম বের করে দেয় কিন্তু অর্গাজম হলে সে ৭০% স্পার্ম নিজের মধ্যে ধারণ করে। আর এর মধ্য দিয়ে সে সঠিক পুরুষ নির্বাচনের কাজটিও সেরে ফেলে। অর্থাৎ সেই ব্যক্তিটিকেই নারী তার সঠিক সঙ্গি হিসেবে নির্বাচন করবে যে কিনা তাকে নিয়মিত চরম পুলক উপহার দিতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, নারীকে চরম পুলক উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সুদর্শন পুরুষেরাই সবচেয়ে এগিয়ে। রান্ডি থর্নহিল, স্টিভেন গেংস্টাডের গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর অর্গাজমের ক্ষেত্রে সুদর্শন পুরুষেরাই বেশি সফল হয়েছে। শর্ট কোর্টশিপে যে কোনো ভালোবাসার সম্পর্ককে যৌন সম্পর্কে নিয়ে যেতে পারে সুদর্শন পুরুষেরা। শুধু তাই নয় পশ্চিমা দেশগুলোতে সুদর্শন পুরুষেরা ডেট করার ক্ষেত্রে কম সময় ও কম অর্থ ব্যয় করে এবং তারা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের প্রতাড়নায় জড়ায় বেশি। এদিকে রবিন বেকার ও মার্ক বেসিরের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সমস্ত নারীরা পরকীয়ায় মত্ত তাদের অর্গাজম অনেক বেশি হয়। অর্থাৎ নিয়মিত সঙ্গীর থেকে গোপন প্রেমিকের সঙ্গে সঙ্গমে নারীর চরম পুলকের হার অনেক বেশি। ব্রিটেনের ৩৬৭৯ জন নারীর উপর জরীপ চালিয়ে তারা দেখেছেন যে, মেযেদের ঋতুচক্রের সবচেয়ে উর্বর সময়গুলোতেই তারা পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ এই সময়টাতে তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি।
গবেষণায় এও দেখা গেছে যে, যে সব মেয়ে পরকীয়াতে জড়ায় তারা তাদের স্বামীর সঙ্গে পুলক জালিয়াতি করে। এটাকে বলা হয় ফেইক অর্গাজম। এটা সে ইচ্ছে করে করে বিষয়টি তা নয়। এটা অবচেতনেই সে করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫% থেকে ৭৪% নারীই পুলক জালিয়াতি করে। তারা এটা করে কারণ তার সঙ্গী যেন তার প্রতি পজেটিভ থাকে আর সে একই সঙ্গে প্রমাণ করতে চায় যে সে তার সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত। আসলে তারা তাদের স্বামীকে ধরা দিতে চায় না যে ইতোমধ্যেই সে আসল পুলক অনুভব করে ফেলেছে। আর এর ফল হচ্ছে কাকোল্ড্রি। শব্দটি এসেছে কোকিল শব্দ থেকে। এটি অন্য পাখির বাসাতে ডিম দেওয়ার অভ্যাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। মধ্য যুগের কবিতা দ্য আউল এন্ড দ্য নাইটিঙ্গেল এ ১২৫০ সালে শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় বলে জানা যায়। ১৪৪০ এর দিকে শেক্সপিযারের লেখায় প্রায়ই কাকোল্ডস উল্লেখ করা হয়। শব্দটি দ্বারা প্রতারিত স্বামীকে বোঝায় যিনি তার স্ত্রীর অবিশ্বস্ততা সম্পর্কে অবগত নন। তার পরিবারে তার সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠার বিষয়ও অবগত নন। কাকোল্ড্রি শব্দটার উদ্ভবই প্রমাণ করে সম্পর্কে প্রতারনা ছিল, আছে এবং থাকবে। গবেষণায় দেখা গেছে আমেরিকায় শতকরা ১৩ থেকে ২০ ভাগ পুরুষ অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান ভেবে পরিবারে বড় করে। জার্মানীতে সেই সংখ্যা ৯ থেকে ১৭ ভাগ। সারাবিশ্বেই নন জেনেটিক সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে বড় করার হার শতকরা ৪ থেকে ১৫ ভাগ বলে মনে করা হয়। বৈজ্ঞানীক পরিভাষায় নন জেনেটিক সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে বড় করার এই প্রতারনাকে বলা হয় কাকোল্ড্রি বা কোকিলাচরণ। গবেষণায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বে যে সব পুরুষ তাদের পিতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান তাদের পরিবারে নন জেনেটিক সন্তান পাওয়ার শতকরা হার ৩০ ভাগ। যদিও কাকোল্ড্রির ঘটনা কোনো সু-সংবাদ নয় কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মেয়েদের মেটিং স্ট্রাটেজি সব সময় অন্যকে তুষ্ট করার জন্য বিবর্তীত হয়নি বরং বিবর্তীত হয়েছে উৎকৃষ্ট জিনের সন্ধানে নিজের প্রজনন সফলতাকে বাস্তবায়িত করার জন্য।
আগামী সংখ্যায় শেষ