সুযোগ

খোকন কোড়ায়া

রুপালীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে ক্রমশ:। আজ মাসের সাতাশ তারিখ, এখন পর্যন্ত কোন বাসা খুঁজে পায়নি ও। হোস্টেল, সাবরেন্ট বাসা অনেক খুঁজেছে কিন্তু সমাধান মেলেনি কোথাও। শুরুতে আগ্রহ প্রকাশ করে সবাই কিন্তু যখনই শুনে নার্স তখন সবার চেহারা পাল্টে যায়। মুখের উপর বলে দেয় – নার্স ভাড়া দিয়ে বাসায় করোনা ঢুকাবো নাকি! এই বাসায় এক বছর যাবত একটি পরিববারের সঙ্গে সাবরেন্ট হিসেবে রুপালীরা চার বান্ধবী থাকে। দেশে করোনা বিস্তারের পর বান্ধবীরা যখন জানতে পারে রুপালীদের হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেয়া হয় তখন থেকেই বন্ধুত্ব কমতে থাকে। এরপর সাত তারিখে জানিয়ে দেয় রুপালী যেন আগামী মাস থেকে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করে।

লকডাউনের মধ্যেও বাসা খুঁজতে বের হচ্ছিলো রুপালী। গেটের কাছে এক যুবক ‘এক্সকিউজ মি’ বলে ওর গতিরোধ করে। মাস্ক খুলতেই যুবককে চিনতে পারে রুপালী, উনার মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওদের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, কয়েকদিন হল সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ভদ্রমহিলা গত পরশুও ফোন করে রুপালীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করেছেন। রুপালীকে বিস্মিত হতে দেখে যুবক বলে – আমাকে চিনতে পারছেন নিশ্চয়ই? মা আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।

-খালাম্মা কি আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নাকি?
-না, মা বলেছেন এখন থেকে আপনি আমাদের বাসায় থাকবেন।
-কি বলছেন আপনি এসব?

কেন মনে নেই, আমার মৃত্যুপথযাত্রী মাকে আপনি যখন সেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেছেন তখন মা আপনাকে একজোড়া কানের দুল উপহার দিতে চেয়েছিলেন, আপনি নেননি, বলেছিলেন, সেবা করাটা আমার দায়িত্ব। মা তখন বলেছিলেন, ঠিক আছে। তবে যদি কখনো তোমার উপকার করার সুযোগ পাই, তখন কিন্তু না করতে পারবে না। আপনি বলেছিলেন, ঠিক আছে খালাম্মা। … আজ মা সেই সুযোগ পেয়েছেন।