অনেক যুগ আগের কথা। একজন মিতভাষী তরুণ অধ্যাপক বরিশাল থেকে ঢাকায় গেলেন নিজের জন্য পাত্রী দেখতে। সাথে অন্য কেউ ছিলেন না, কারণ অধ্যাপকবাবু আনুষ্ঠানিকতা পছন্দ করতেন না। হয়তো ভেবেছিলেন- কনে দেখতে যাওয়ার ব্যাপারটা সেজেগুজে দলবল গুছিয়ে যাবার মতো কিছু নয়। ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছানোর পর পাত্রীর জ্যাঠামশাই ও একমাত্র অবিভাবক অমৃতলাল গুপ্ত অতিথিকে দোতলার বসার ঘরে নিয়ে গেলেন।
এদিকে যার জন্য এই অতিস্বল্প-অনানুষ্ঠানিক কনে দেখার আয়োজন সেই লাবণ্যপ্রভা গুপ্ত হস্টেল থেকে ফিরেছেন অতিথি-আগমনের কিছুক্ষণ পর। তখন পর্যন্ত লাবণ্য এই আয়োজনের বিন্দুবিসর্গ কিছুই জানেন না। তিনি ইডেন কলেজের উচ্চ-মাধ্যমিকের ছাত্রী, হস্টেলে থেকে পড়েন। হঠাৎ জ্যাঠামশাই বাড়িতে আসার জন্য খবর পাঠালেন। তখন কলেজে ক্লাস চলছে নিয়মিত – তাই লাবণ্য বেশ বিরক্ত। আগের দিনের বৃষ্টিতে জমে থাকা জলকাদা শাড়িতে জড়িয়ে তিনি বাড়িতে উপস্থিত হলেন। এ অবস্থা দেখে লাবণ্য’র বেথুন-পড়ুয়া দিদি হেসে অস্থির। লাবণ্য দিদিকে বললেন- ‘হাসি থামিয়ে এখন দয়া করে কিছু খেতে দিয়ে বাধিত কর্।’
নিচতলার এই হাসি-কথাবার্তার শব্দে হয়তো দোতলা থেকে জ্যাঠামশাই ও অধ্যাপকবাবু বুঝতে পেরেছেন- পাত্রী উপস্থিত। জ্যাঠামশাই দোতলা থেকে ডাকলেন- ‘মা লাবণ্য, কয়েকখানা লুচি নিয়ে এসো তো।’
নকশা করা তাঁতের শাড়ির পাড়ে তখনও কাদা লেগে আছে, সেটা পরিবর্তন করা সময়ের ব্যাপার। অতঃপর লাবণ্যপ্রভা সেই কাদামাখানো শাড়ি পরে, লম্বা বেণী দুলিয়ে, লুচি-মিষ্টান্ন হাতে নিয়ে দোতলার বসার ঘরে প্রবেশ করলেন। দেখলেন অতিথি একজনই, ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত শ্যামবর্ণের মাঝারি গড়নের তরুণ। তিনি লাবণ্য’র দিকে একপলক তাকিয়েই সঙ্কোচে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। লাবণ্য চাপা হাসি সামলানোর চেষ্টা করছেন। এই হাসির কারণ ও অর্থ বিশ্বসাহিত্য-পরিভ্রমণকারী চন্দ্রদ্বীপ নিবাসী এই অধ্যাপকবাবুর বোধগম্য কি না – সে খবর হয়তো বিধাতারও অজানা।
জ্যাঠামশাই অতিথির সাথে লাবণ্য’র পরিচয় করিয়ে দিলেন। লাবণ্য জানতে পারলেন – অতিথির নাম জীবনানন্দ দাশগুপ্ত, ইংরেজির অধ্যাপক, দিল্লীর রামযশ কলেজে পড়ান। পরিচয়পর্বে দাশগুপ্তবাবু চোখ তুলে নমস্কার ক’রে আরেকবার দেখলেন লাবণ্যপ্রভাকে। শ্যামবর্ণ ও গৌরবর্ণের মাঝামাঝি গায়ের রঙ, সকালের রোদের মতো উজ্জ্বল চোখ, মুখের লাবণ্য, চাঞ্চল্য, হাসির উচ্ছ্বাস ‘লাবণ্যপ্রভা’ নামের ‘লাবণ্য’ ও ‘প্রভা’ – এই দুটি অংশেরই সার্থকতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। পরিচয়পর্বে শুরু হওয়া সেই হাসির তরঙ্গমালায় বাঁধ দিতে না পেরে লাবণ্য অতিথির দিকে পেছন ফিরে বসে পড়লেন। এই ঘটনায় অধ্যাপকবাবুর বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।
‘মাধবীলতায় ভাষাহারা ব্যাকুলতাপল্লবে
পল্লবে প্রলপিত কলরবে
প্রজাপতির পাখায় দিকে দিকে লিপি নিয়ে যায়
উৎসব- আমন্ত্রণে’’
রবি ঠাকুর হয়তো এই কথাগুলো এরকম মুহূর্তের জন্য রচনা করেছিলেন।
অনেক্ষণ চেষ্টার পর লাবণ্য অতিথির দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন। এবার সঙ্কটে পড়লেন অধ্যাপকবাবু, কারণ এবার তাকে কিছু একটা বলতে হবে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে তিনি লাবণ্যকে একটানা তিনটি প্রশ্ন করলেন – ‘আপনার নাম কি? আই.এ-তে কি কি সাবজেক্ট নিয়েছেন এবং কোনটি বেশি পছন্দ?’
কোনরকমে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে লাবণ্য দৌড়ে নিচে চলে গেলেন এবং চাঞ্চল্য ধরে রাখতে না পেরে রান্নাঘরে ঢুকে দিদির পিঠে কিল মারতে আরম্ভ করলেন। দিদি সামলে নিয়ে বললেন- ‘তোর হলো কি?’ লাবণ্য’র স্পষ্ট জবাব – ‘আমার কেন হতে যাবে? হয়েছে তোমাদের। আজ তোমরা আরম্ভ করেছ কি? ঐ ভদ্রলোকটি কে? আর আমাকে সাতসকালে ডেকে পাঠাবারই বা কারণ কি?’ দিদি বললেন – ‘আমি কি জানি? ভদ্রলোকটির খবর তো তোরই রাখবার কথা’ একথা বলে দিদি চলে গেলেন।
লাবণ্য’র চোখে-মুখে-ললাটে বিস্ময় ও কৌতুহলের মিলিত ভাঁজ। হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন হয়তো পারেননি। কিছুক্ষণ পর লাবণ্য দেখতে পেলেন – অধ্যাপক দাশগুপ্তকে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন জ্যাঠামশাই।
২
লাবণ্যপ্রভার পরিবারের নিবাস ছিল খুলনার সেনহাটিতে। পিতা রোহিনীকুমার গুপ্ত আসানসোলে চাকরি করতেন। লাবণ্য’র বয়স যখন সাত, হঠাৎ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যান। ঠিক পাঁচ মাস পরে মা সরযূবালাও চিরবিদায় নিলেন। তারপর লাবণ্যদের তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ছোটবোন ও ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব নিলেন মেজো জ্যাঠামশাই বিহারীলাল গুপ্ত এবং লাবণ্য ও প্রমীলা এই দুই বোনের ভার নিলেন দেবতুল্য বড় জ্যাঠামশাই অমৃতলাল গুপ্ত। তিনি চিরকুমার ছিলেন, পিতৃমাতৃহীন এই মেয়ে দুটিকে তিনি মায়ের আদর ও বাবার ভালবাসার বিন্দুমাত্র কমতি না রেখে মানুষ করেছেন। পাটনা থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর লাবণ্য ঢাকায় এসে ইডেন কলেজে ভর্তি হলেন। নতুন কলেজ-জীবনে প্রবেশের পর মুক্তির আনন্দে ভরে উঠতে লাগলো দিনগুলো। ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতিক কর্মকাণ্ডে। অনুমান করা যায় এ কারণেই লাবণ্য’র বিয়ের কথা চিন্তা করেছিলেন অমৃতলালবাবু। তিনি ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী ছিলেন, জীবনানন্দ দাশের পরিবারও তাই। ঢাকার কোনো এক ব্রাহ্মসভায় কবি কুসুমকুমারী দাশ লাবণ্যকে দেখে মুগ্ধ হয়ে মনে মনে নির্বাচন করেছিলেন তাঁর আদরের মিলুর জন্য। মায়ের কথায় মত দিয়েছিলেন মিলু (জীবনানন্দ)। অপরদিকে অত শীঘ্র বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না লাবণ্যপ্রভার। জ্যাঠামশাই লাবণ্যকে বললেন – ‘তুমি যে বিয়ে করতে চাইছো না, আমি চোখ বুজলে তোমাকে কে দেখবে?’
কথাটা মিথ্যে নয়, পিতৃমাতৃহীন ভাইঝিকে পাত্রস্থ করতে পারলে তিনি শান্তিতে মরতে পারবেন। লাবণ্য পাত্রের মতামত জানতে চাইলে অমৃতলালবাবু হাসতে হাসতে বললেন – ‘তিনি সকালে তোমাকে দেখেই মত দিয়েছেন’ জ্যাঠামশাই লাবণ্যকে এই মর্মে আরও আশ্বস্ত করলেন যে, বিয়ের পর অধ্যাপক দাশগুপ্ত তাকে পড়াবেন অতএব পড়ালেখা বন্ধ হচ্ছে না। লাবণ্য মত দিলেন।
আসলে নম্র-বিনয়ী-অল্পভাষী ওই অধ্যাপককে দেখে ভরসা করেছিলেন অমৃতলালবাবু। ভেবেছিলেন মোটা ভাত মোটা কাপড়ের অভাব হবে না, আর ছেলেটি লাবণ্যকে সুখে রাখবে। জীবনানন্দ দাশের কবি পরিচয় তখনও তাদের অজানা। কয়েক বছর আগেই ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় কবিতা ছাপা হয়।
বঙ্গদেশের কন্যাদায়গ্রস্থ অবিভাবকদের কাছে পাত্রের কবিপ্রতিভা কোনদিনই বিবেচনার বিষয় ছিল না, আজও নয়। সামান্য মোটা ভাত মোটা কাপড়ের নিশ্চয়তা, মাথার উপরে খড়ের চাল, এতটুকু সুখই তখনকার দিনে বাঙালীসমাজে যথেষ্ঠ বলে গণ্য হতো। লাবণ্য’র জ্যাঠামশাইয়ের চাহিদা ওই পর্যন্তই। এখনকার মতো রাক্ষুসে ভোগবিলাস, দামী বাড়ি-গাড়ির চাহিদা ছিল না সেদিন। অল্পতে তুষ্ট থাকার মহত্ত্ব বাঙালির ছিল।
৩
উভয় পরিবারের অবিভাবক ও পাত্র-পাত্রীর সম্মতিতে বিয়ের দিন স্থির হলো। জীবনে প্রথম নিজে শাড়ি কিনলেন লাবণ্য, আশীর্বাদের শাড়ি। নতুন শাড়ির পাড়ের মতো বোনা নতুন স্বপ্ন নিয়ে দিন পার হচ্ছিল লাবণ্য প্রভার।
লাবণ্য হিন্দুঘরের মেয়ে কিন্তু জ্যাঠামশাই ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। যদিও লাবণ্যের সব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারী একমাত্র তিনি, তবুও সব মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী অমৃতলালবাবু লাবণ্যকে জিজ্ঞেস করলেন – কোন মতে বিয়ে হবে? হিন্দু মতে না ব্রাহ্ম মতে?
এমন ক’জন অবিভাবক পাওয়া যায় আজকের এই তথাকথিত আধুনিক যুগে? লাবণ্য জানালেন, ব্রাহ্ম মতে বিয়ে করতে তার কোনো আপত্তি নেই। বিয়ের স্থান নির্ধারণ করা হলো এখনকার পুরানো ঢাকার পাটুয়াটুলীর ব্রাহ্মসমাজের পাশে অবস্থিত ‘রামমোহন লাইব্রেরি’তে। গ্রন্থাগারে বিয়ের ঘটনা বোধ করি বঙ্গদেশে প্রথম! এমনকি সারা পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা বিজ্ঞজনেরা বলতে পারবেন। সবার থেকে আলাদা ওই অধ্যাপকবাবুর জীবনের ঘটনাগুলিও চমকপ্রদ।
সেদিন ২৬শে বৈশাখ, ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ, শুক্লা চতুদর্শী। উভয়পক্ষের অল্পসংখ্যক আত্মীয়-শুভাকাঙ্খীর উপস্থিতিতে অধ্যাপক জীবনানন্দ দাশগুপ্ত ও লাবণ্যপ্রভা গুপ্তের শুভপরিণয় সম্পন্ন হলো। জীবনানন্দের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু, কবি অজিত দত্ত ও অন্যান্য বন্ধুরা।
বিয়ের পর ফুলশয্যা, কিন্তু তখনকার কথোপকথনের ঘটনা পাঠকদের জানার কথা নয়। এক্ষেত্রেও অধ্যাপকবাবু বিস্ময় সৃষ্টি করলেন – যা লাবণ্যদেবী নিজেই লিখেছেন তাঁর লেখা গ্রন্থে। সেই বই থেকে সেই অভাবনীয় অংশটুকু হুবুহু উদ্ধৃত করছি-
‘ ফুলশয্যার রাতে তাঁর প্রথম কথা হ’ল – ‘আমি শুনেছি তুমি গান গাইতে পার। একটা গান শোনাবে?’
আমি আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কোনটা?’
‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’, গানটা যদি জান তবে সেটাই শোনাও।’
আমার এখনও মনে পড়ে প্রথমবার গাইবার পরে তিনি আরও একবার গাইতে বললেন
‘অনেকদিন পর আমি একদিন হাসতে হাসতেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
‘আচ্ছা, তুমি প্রথম দিনেই জীবন মরণের সীমানা ছাড়াতে চেয়েছিলে কেন’?
তিনি হেসেই উত্তর দিলেন- ‘এই লাইন দুটোর অর্থ বলো তো?’
“ আজি এ কোন্ গান নিখিল প্লাবিয়া
তোমার বীণা হতে আসিল নাবিয়া’’
আমি চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি তখন আস্তে আস্তে বললেন,
‘জীবনের শুভ আরম্ভেই তো এই গান গাওয়া উচিত এবং শোনাও উচিত।
বিয়ের পর লাবণ্যকে আনা হলো শ্বশুরবাড়ি বরিশালে। এ এক অন্য ভুবন: নদী-জলাশয়-সরোবরে ঘেরা বিধাতার নিজ হাতে গড়া মর্ত্যের স্বর্গ। এখানে আকাশ মাটির কাছাকাছি, এখানে মানুষ নরম মাটিতে গড়া। এখানে আছে জলমগ্ন এলাকায় নৌকায় ভেসে যাওয়ার গল্প, আনন্দ-দুঃখ-উৎসবের জীবন। এখানে আছে ঐশ্বর্যে ভরা ফসলের ক্ষেত, মমতায় গড়া ছোট-ছোট বাড়ি, নদীর বুকে বিরাট ভাসমান হাটের লেনদেন। এখানে নদীর হৃদয় আছে নারীর মতো, আছে বিরহিণীর মতো অভিমান, কিশোরীর মতো চাঞ্চল্য। কীত্তনখোলা, ধানসিঁড়ি, বলেশ্বর, সন্ধ্যা, সুগন্ধায় ঘেরা এই চন্দ্রদ্বীপের মাঝে লাবণ্য স্থান পেয়েছেন দাশগুপ্ত পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূরূপে।
জীবনানন্দের পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত বিক্রমপুর থেকে বরিশালে এসে পাঁচ-ছয় বিঘা জমির উপর এই বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বিরাট সংসার, অনেক জায়গা নিয়ে তৈরি বড়-বড় ঘরগুলো লাবণ্যকে বিস্মিত করেছিল। বাড়ির পিছনে ¯স্নিগ্ধ পুকুর, চারদিকে আম-জাম-বট-অশ্বথ ও নানারকম ফুল-ফলদ বৃক্ষের বাগান, শাল-সুন্দরী-গরাণের খুঁটিতে তৈরি ঘর, ভেতরে অবাধ সাহিত্যচর্চার জগৎ, চারদিকে বই। লাবণ্যপ্রভা এখন এই বাড়ির বড় বউ। এই বাড়ির প্রতিটি মানুষ, ঘর-বাড়ি, বাগ-বাগিচা, ফুল-পাখির সমারোহ সবই তাঁর আপন। বন্ধনে-মায়ায়-মমতায় গড়া এই পরিবার এখন তাঁর নিজের। লাবণ্যপ্রভার শ্বশুরমশাই সত্যানন্দ দাশগুপ্ত শিক্ষক-লেখক। শাশুড়ী কুসুমকুমারী দাশ কবি এবং এই পরিবারের সব ভার যেন তাঁর কাঁধে। দেবর অশোকানন্দ, ননদ সূচরিতা, ঠাকুমা প্রসন্নময়ী। এদিকে অধ্যাপকবাবুর বিচরণ হিজল, শিরীষ, শটিবন, বাসকলতা-পেঁচা, শঙ্খচিল-শালিখের রাজ্যে।
লাবণ্যপ্রভার কাছে বাঙলার এই আদি একান্নবর্তী পরিবারের সৌন্দর্য অপরিচতি ছিল। শ্বশুর-শাশুড়ী-স্বামী, দেবর-ননদ, কাকা-কাকিমা, ঠাকুরদা-ঠাকুমার ¯স্নেহে-শাসনে-ভালবাসায় গড়া এই একান্নবর্তী পরিবারগুলো বাঙালির ঔদার্যের ইতিহাস হয়ে আছে।
বিয়ের পর অধ্যাপকবাবু কথা রেখেছিলেন। তিনি ও তাঁর পরিবারের আন্তরিক সহযোগিতায় লাবণ্য শ্বশুররবাড়িতে থেকে বি এ পাশ করেন। লাবণ্যপ্রভা হয়তো জানতেন না, যে অধ্যাপকবাবুর হাত ধরে তিনি এই সংসারে এলেন – তিনি এই দেশ, এই বাঙলা, এই প্রকৃতি এই নদীগুলোর শ্রেষ্ঠ উপাসনামন্ত্র রচনা করে এই দেশে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রতিদিন তাঁর রচনা পাঠ করবে বাঙালি, আঁধার ভেদ করে তাঁকে নিয়ে চর্চা হবে প্রতিদিন। তিনি মিশে থাকবেন বাঙলার মাঠে-নদীতে-অরণ্যে-পাখিদের মুক্ত ডানায়, তরুণ কবির স্বপ্নে, বিদগ্ধজনের পান্ডিত্যপূর্ণ গবেষণায়। তাঁর জীবনী লেখা হবে শত শত বছর ধ’রে এবং সেখানে ‘জীবনানন্দ দাশ’ নামটির সাথে ‘লাবণ্য দাশ’ নামটিও লেখা থাকবে চিরদিন। লাবণ্যপ্রভার জীবনে এ সবকিছুর উৎস সেই দিনটি–
২৬ শে বৈশাখ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ, শুক্লা চতুদর্শী তিথি।
তথ্যসূত্র –
১. ‘মানুষ জীবনানন্দ – লাবণ্য দাশ
২. লাবণ্য দাশের সাক্ষাৎকার – কবিতা সিংহ
৩. ‘জীবনানন্দ দাশ’ – সিরাজ সালেকীন
৪. জীবনানন্দ রচনাবলি – ঐতিহ্য (নতুন সংস্করণ)
৫. ‘বরিশালের জীবনানন্দ’ (প্রবন্ধ) – লীনা দিলরূবা
৬. সাক্ষাৎকার – ভূমেন্দ্র গুহ (দৈনিক ‘প্রথম আলো’, ১৫ ই মে ২০০৯)