রবীন্দ্রনাথ যে পরলোক-চর্চা করতেন তা সুবিদিত। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কথাপ্রসঙ্গে মৈত্রেয়ী দেবীকে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে কত কিছু তুমি জানো না, তাই বলে সেসব নেই? কতটুকু জানো? জানাটা এতটুকু, না জানাটাই অসীম।’ পরলোক-সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৌতূহলের শেষ ছিল না। তিনি শুধুই জানতে চাইতেন, কী আছে শেষে? মৃত্যুর পরে মানুষ কী করে?
রবীন্দ্রনাথ উমা দেবীকে মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করে প্ল্যানচেট করতেন। মিডিয়াম উমা দেবীর দেহে ভর করতো রবীন্দ্রনাথের প্রার্থিত আত্মা। ক্ষিপ্রবেগে লেখা হতো পরলোক-সমাচার।
রবীন্দ্রনাথ যাঁদের প্ল্যানচেট-এর মাধ্যমে আহ্বান করে কথোপকথন করতেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা মাধুরীলতা, কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, সুকুমার রায় প্রমুখ। শমীন্দ্রনাথ অকালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বার বার শমীর আত্মাকে ডাকতেন। রবীন্দ্রনাথ শমীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, লৌকিক পৃথিবীর সব কথা তার মনে আছে কি-না! শমী জানিয়েছিলেন, তিনি পরলোকে গড়ে তুলেছেন একটি নতুন পৃথিবী।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে সুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের মৃত্যু হয়। তাঁর সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের কথা হয়েছিল প্ল্যানচেট-এর মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ জানতে চান, ‘সুকুমার, কেমন আছ তুমি?’ সুকুমার বলেন, ‘অন্য কথা বলুন।’ রবীন্দ্রনাথ এরপর জিজ্ঞেস করেন, ‘পৃথিবীর সঙ্গে এখন তোমার যোগাযোগ আছে?’ সুকুমার উত্তর দেন, ‘নিশ্চয়ই, যোগাযোগ আছে।’ রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আর কিছু বলো।’ সুকুমার বলেন, ‘আমার পৃথিবীর নেশা আজও কাটে নি। তাই পরলোকের কোনো সুর আজও মনে লাগে না।’
ইহজীবনে কবিগুরু অনেক দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, অনেক মনীষীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। এসব সাক্ষাৎকার আজ ইতিহাস। এখানে কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার কিছু চুম্বক-অংশ গ্রথিত হলো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন – উভয়েই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ছিলেন বিশ্বখ্যাত। আক্ষরিক অর্থেই বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারের অধিকারী ছিলেন তাঁরা। এই দুই ব্যক্তিত্ব একাধিকবার মিলিত হয়েছিলেন একান্ত আলাপচারিতায়। রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুলাই প্রথমবার যখন জার্মানিতে মিলিত হন, তখন উভয়েই নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন – রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে এবং আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে।
বার্লিনের অদূরে একটি পাহাড়ের ওপরে আইনস্টাইনের বাড়িতে উভয়ে মিলিত হন। ৪২ বছর বয়সী আইনস্টাইন রাস্তায় নেমে আসেন তাঁর ৭০ বছর বয়সী বাঙালি অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য। আইনস্টাইন তাঁর অতিথি-সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘এই মানুষটির চমক-জাগানো সাদা চুল, উজ্জ্বল চোখ, উষ্ণ ব্যবহার আবার আমাকে অভিভূত করলো তাঁর মানবিক গুণাবলি-সম্পর্কে, যিনি নিবিড় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন জ্যামিতি ও গাণিতিক সূত্র নিয়ে। তিনি আমাদের কাছে আত্মা, আলো এবং ঐকতানের জীবন্ত প্রতীক। তাঁর শিল্পকলা মানবিক দুঃখ-যাতনা এবং সংগ্রাম থেকে কখনোই পৃথক থাকে নি, তিনি একজন মহান প্রহরী। আমাদের এবং আমরা যাদের সৃষ্টি করেছি – তাঁদের সকলেরই মূল ও শিকড় রয়ে গেছে কবিতা ও ভালোবাসার সেই বিশাল অববাহিকায়।
রবীন্দ্রনাথ লেখেন, তিনি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন আইনস্টাইনের অতুলনীয় সরলতার কারণে: ‘আইনস্টাইনকে প্রায়শই বলা হয় নিঃসঙ্গ মানুষ। দৈনন্দিন জীবনের জনাকীর্ণ তুচ্ছতা থেকে গাণিতিক দৃষ্টিভঙ্গি মনকে যেমন মুক্তি দেয়, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমার ধারণা তিনি একজন নিঃসঙ্গ মানুষ। তাঁকে বলা যেতে পারে একজন অলৌকিক মানুষ, যিনি অধিবিদ্যার একেবারে গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। আমার কাছে বিজ্ঞান ও শিল্পকলা – উভয়ই আমাদের আধ্যাত্মিক প্রকৃতির বহিঃপ্রকাশ, যার অবস্থান আমাদের জৈবিক চাহিদার ওপরে এবং যা চূড়ান্ত মূল্যবোধের অধিকারী। আইনস্টাইন চমৎকার একজন প্রশ্নকারী। তাঁর মধ্যে জটিল কোনো কিছুই ছিল না – ছিল না বুদ্ধিবৃত্তিক উদাসীনতাও। তাঁকে আমার এমন একজন মানুষ বলে মনে হয়েছিল, যিনি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মূল্য দিতেন। আমার প্রতি তাঁর ছিল অকৃত্রিম আগ্রহ ও সহমর্মিতা।’
মারিয়ানফ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে এই সাক্ষাৎকারের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর শিরোনাম ছিল, ‘আইনস্টাইন ও ঠাকুরের সত্যসন্ধান’ (Einstein and Tagore Plumb the Truth)। নোবেল পুরস্কারের ১০০তম প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকী উপলক্ষে সাক্ষাৎকারটি ব্রিটিশ সাহিত্য সাময়িকী স্ট্যান্ড-এর সঙ্গে যৌথভাবে বিস্তৃত কলেবরে প্রকাশিত হয় দ্য কেনিয়ন রিভিউ-তে।
প্রায় সার্বিকভাবেই এই দুই কিংবদন্তি ছিলেন ভিন্নতর – জাতীয়তা, সাংস্কৃতিক পটভূমি, পেশা এবং সার্বক্ষণিক চিন্তাভাবনায়। তারপরেও তাঁরা মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন পারস্পরিক অবদান, সত্য-অন্বেষণ এবং সংগীত-প্রীতি বিষয়ে তাঁদের কৌতূহলের কারণে। রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন-কথোপকথন পরিপূর্ণ ছিল সৃষ্টিতাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি, এ দুব্যক্তিত্বের দর্শন এবং কলা-বিষয়ে তাঁদের আগ্রহাতিশয্যে। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অসাধারণ সৃষ্টিশীল এক কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক এবং প্রবন্ধকার।
রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের প্রথম সাক্ষাৎকারটি সমৃদ্ধ ছিল সত্য এবং বাস্তবতার প্রকৃতি-বিষয়ে। আইনস্টাইনের জিজ্ঞাসা ছিল – মানুষের মধ্যে সত্য ও সুন্দর স্বাতন্ত্র্য নিয়ে অবস্থান করে কি-না। রবীন্দ্রনাথ যখন এটির বিরুদ্ধ-মন্তব্য প্রকাশ করেন, তখন আইনস্টাইন বলেন, তিনি সৌন্দর্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে একমত, কিন্তু সত্যের সাপেক্ষে নয়। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘সত্য উপলব্ধ হয় মানুষের মধ্য দিয়েই। যদি এমন কোনো সত্য থেকে থাকে, যার মানবমনের সঙ্গে কোনো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা যুক্তিসিদ্ধ সম্পর্ক নেই, তবে তা আমাদের এই মানবদেহের মতোই ক্ষণস্থায়ী হবে।’ আইনস্টাইন এর উত্তরে বলেছিলেন, ‘তাহলে আমি আপনার চেয়ে বেশি ধার্মিক!’
পরের মাসে তাঁরা আবার মিলিত হন বার্লিনে। ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৪টি সাক্ষাতের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয়। এই সময় তাঁরা আলোচনা করেন তাঁদের পরিবার, জার্মানির তরুণ-আন্দোলন, সুযোগ ও পূর্ব-সংকল্পের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে। এই আলোচনা সঞ্চালিত হয় পাশ্চাত্য ও ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের পার্থক্য-বিষয়ে। রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেন, ‘মানবীয় কর্মকাণ্ডে নমনীয় কিছু উপাদান রয়েছে – ক্ষুদ্র পরিধিতে রয়েছে কিছু স্বাধীনতা, যা আমাদের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে।’ তিনি সেই স্বাধীনতাকে ভারতীয় সংগীতের সঙ্গে তুলনা করেন। বলেন, ‘ভারতবর্ষে কোনো সংগীত-শিল্পীর স্বাধীনতা পরিমাপ করা হয় তাঁর নিজস্ব সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব দিয়ে। তিনি পরিচালিত হন তাঁর শৈল্পিক নীতি-চেতনা দ্বারা।’
কোনো সমালোচনার মধ্যে না গিয়ে উভয়েই একমত হন যে, সংগীতের সৌন্দর্য বিশ্লেষণের অতীত। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমাদের মনে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য-সংগীতের প্রভাবের বিষয়টি বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত কঠিন। আমি পাশ্চাত্য-সংগীত দ্বারা গভীরভাবে আন্দোলিত হই এই কারণে যে, এটি আয়তনগতভাবে বিশাল এবং সুর-সংযোজনায় মহান। আমার নিজের গান আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে এর মৌলিক গীতিধর্মী আবেদনের কারণে। ইউরোপীয় সংগীত চরিত্রে মহাকাব্যিক, বিশাল পটভূমিসমৃদ্ধ এবং নির্মাণে গথিক স্থাপত্যরীতির প্রতিরূপ।’
আইনস্টাইন উত্তরে বলেন, ‘আমরা জানতে চাই আমাদের সংগীত গতানুগতিক, না-কি মৌলিক মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন। এতে সুরের স্বাভাবিক মিল অনুভব করা যায়, না-কি অমিল। না-কি এটি কোনো রীতিসিদ্ধ ব্যাপার, যা আমরা মেনে নিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই একই অনিশ্চয়তা সব সময় কাজ করছে আমাদের অনুভবের সকল মৌলিক ক্ষেত্রে, কলা-বিষয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়ায়, তা ইউরোপ বা এশিয়া, যেখানেই হোক না কেন। এমনকি আপনার টেবিলে আমি যে লাল ফুলটি দেখছি – তা আপনার-আমার কাছে এক না-ও হতে পারে।’
রবীন্দ্রনাথ এই বিষয়ে সম্মতও হন নি বা অসম্মতও হন নি, বরং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি সমাধানমূলক অবস্থানের সন্ধান করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখনো এদের মধ্যে সমন্বয়-সাধনের প্রক্রিয়া চলছে। স্বতন্ত্র রুচি মানিয়ে নেয়া হচ্ছে বিশ্বজনীন বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে।’
রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইনের কথোপকথন কতখানি বৈশিষ্ট্যময় ছিল তা বিধৃত হয়েছে নিুলিখিত আলাপচারিতায়।
আইনস্টাইন: আপনি কি মনে করেন স্বর্গীয় গুণাবলিগুলো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন?
রবীন্দ্রনাথ: বিচ্ছিন্ন নয়। মানুষের অনন্ত ব্যক্তিত্ব বিশ্বজগতের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে এমন কিছুই নেই, যা মানব-ব্যক্তিত্বের অধীন নয়। এটি প্রমাণ করে যে, বিশ্বজনীন সত্য হচ্ছে মানবিক সত্য। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টান্ত দিয়ে আমি এর প্রমাণ দিতে পারি। পদার্থ গঠিত হয় প্রোটন ও ইলেকট্রন দিয়ে। এদের মধ্যে ফাঁক রয়েছে। কিন্তু যে ফাঁকটি স্বতন্ত্র ইলেকট্রন ও প্রোটনকে সমন্বিত করেছে, তাদের মধ্যে যদি সংযোগ না থাকত, তা হলে পদার্থকে মনে হতো নিরেট। একইভাবে মানবজাতি গঠিত স্বতন্ত্রতা নিয়ে, তারপরেও তাদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে মানবিক সম্পর্কের। এটিই মানব-বিশ্বকে দেয় জৈব একক। একইভাবে সমগ্র বিশ্ব আমাদের সঙ্গে স্বতন্ত্ররূপে সম্পর্কযুক্ত – এটি একটি মানবিক বিশ্ব। আমি এই চিন্তাধারণা অনুসন্ধান করেছি শিল্পকলা, সাহিত্য এবং মানুষের ধর্মীয় সচেতনতার মধ্য দিয়ে।
আইনস্টাইন: বিশ্বপ্রকৃতি সম্বন্ধে দুটি পৃথক ধারণা রয়েছে – বিশ্ব এক হিসেবে মানবতার ওপর নির্ভরশীল আর অন্যটি হচ্ছে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব মানব-প্রকৃতি হতে স্বতন্ত্র।
রবীন্দ্রনাথ: যখন আমাদের বিশ্বজগৎ মানুষের সঙ্গে ঐকতানে মিলিত হয়, চিরন্তন রূপ নেয়, তখনই আমরা একে সত্য বলে জানি, একে সৌন্দর্য হিসেবে অনুভব করি।
আইনস্টাইন: এটিই বিশ্বজগৎ-সম্পর্কে মানুষের পরিপূর্ণ ধারণা।
রবীন্দ্রনাথ: অন্য কোনো ধারণা থাকতে পারে না। এই বিশ্ব একটি মানবিক বিশ্ব। এর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি যা, বৈজ্ঞানিক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও তা-ই। আর সে-কারণেই আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিশ্ব টিকে থাকতে পারে না। এটি একটি আপেক্ষিক বিশ্ব। এর বাস্তবতা নির্ভরশীল আমাদের সচেতনতার ওপর। সেখানে রয়েছে কিছু কারণগত বৈশিষ্ট্য ও সুযোগ-সুবিধা, যা একে সত্যতা দান করে – রয়েছে পার্থিব মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য, যার অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।
আইনস্টাইন: এটি মানবিক অস্তিত্বের একটি উপলব্ধি।
রবীন্দ্রনাথ: হ্যাঁ, একক চিরন্তন অস্তিত্ব। এটি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে আবেগ-অনুভূতি ও কর্মকাণ্ড দ্বারা। আমরা সেই পরম মানবকে উপলব্ধি করতে পারি, আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে, যার কোনো স্বতন্ত্র সীমাবদ্ধতা নেই। যে বিষয়টি স্বতন্ত্রতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিজ্ঞান সে-সম্বন্ধে সচেতন। এটি হচ্ছে সত্যের নৈর্ব্যক্তিক মানববিশ্ব। ধর্ম এ সত্যগুলোকে উপলব্ধি করতে পারে এবং আমাদের গভীরতর প্রয়োজনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। সত্য-সম্বন্ধে আমাদের স্বতন্ত্র সচেতনতা অর্জন করতে পারে বিশ্বজনীন তাৎপর্য। ধর্ম সত্যের ওপর মূল্যবোধ আরোপ করে এবং এর সঙ্গে আমাদের নিজস্ব ঐকতানের মধ্য দিয়ে আমরা একে সত্য বলে জানি।
আইনস্টাইন: তাহলে সত্য বা সৌন্দর্য মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নয়?
রবীন্দ্রনাথ: না।
আইনস্টাইন: কোনো মানুষই যদি না থাকে, তাহলে তো বেলভেডিয়ারের অ্যাপোলো আর সুন্দর থাকবে না।
রবীন্দ্রনাথ: না।
আইনস্টাইন: আমি সৌন্দর্যের প্রেক্ষাপটে এই ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারি, কিন্তু সত্যের পরিপ্রেক্ষিতে নয়।
রবীন্দ্রনাথ: কেন নয়? সত্য মানুষের মধ্য দিয়েই উপলব্ধি হয়।
আইনস্টাইন: আমি প্রমাণ করতে পারবো না যে, আমার ধারণা সঠিক, কিন্তু সেটিই আমার ধর্ম।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর আইনস্টাইনকে উদ্দেশ্য করে রবীন্দ্রনাথ একটি পোস্টকার্ডে লেখেন, ‘তাঁর প্রতি আমার অভিবাদন, যিনি অপূর্ণ আমাকে জানতেন এবং ভালোবাসতেন।’
রবীন্দ্রনাথ ও কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ এইচ.জি. ওয়েলস-এর সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে জেনেভায়। সেই সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত রূপ এখানে উপস্থাপিত হলো।
রবীন্দ্রনাথ: আধুনিক সভ্যতার একটি প্রবণতা হচ্ছে বিশ্বকে সমরূপবিশিষ্ট করা। কলকাতা, বোম্বে, হংকং এবং অন্যান্য আরো কিছু শহর কমবেশি একই রকম। এমন একটি বড় মুখোশ পরে আছে যে, কোনো দেশকেই আলাদা করে চেনা করা যায় না।
ওয়েলস: এখন কি আপনার মনে হয় না যে, এ নিগূঢ় সত্যটি একটি ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা একটি নব্য বিশ্বজনীন মানবীয় সুবিন্যস্ততায় পৌঁছতে চাইছি, যা স্থানীয়করণ হতে অস্বীকার করে?
রবীন্দ্রনাথ: আমাদের স্বতন্ত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অভিন্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মনটাকে সর্বজনীন হতে হবে। স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দেয়া যাবে না।
ওয়েলস: এখন আমরা ক্রমান্বয়ে চিন্তা করছি এমন একটি মানবীয় সভ্যতার কথা, যার স্বাতন্ত্র্যের ভিত্তি হবে পরিপূর্ণতার অপার সুযোগ। আমাদের দৃষ্টিতে স্বাতন্ত্র্যের ত্রুটি হচ্ছে এই যে, সভ্যতা টুকরো-টুকরো হয়ে পৃথক-পৃথক এককে পরিণত হয়েছে। বিশ্বজনীন সম্পূর্ণতায় তা আর অঙ্গীভূত হয় নি। মানবজাতির স্বাভাবিক পরিণতিও তা-ই হবে বলে আমার মনে হয়।
রবীন্দ্রনাথ: আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক সহভাগিতা ও সহযোগিতার মধ্য দিয়েই মানবসভ্যতা উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করতে পারে। আপনি কি মনে করেন, একটি সাধারণ সম্প্রদায় বা মানবজাতি-সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে?
ওয়েলস: আমরা পছন্দ করি বা না-ই করি, একটি সাধারণ ভাষা মানবজাতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আগে উঁচুমনের কোনো সম্প্রদায় নতুন-নতুন ভাষা সৃষ্টি করত। এখন আমাদের জন্য আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি বিশ্বজনীন ভাষা পরিগ্রহণ করা।
রবীন্দ্রনাথ: আমি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত। পাঁচ মাইল দীর্ঘ কথার যুগ ক্রমশ নিঃশেষিত হচ্ছে। নিবিড় যোগাযোগও প্রতিষ্ঠা করতে পারে একটি প্রচলিত বা সাধারণ ভাষা। এই সাধারণ ভাষাটি জাতীয় ভাষা-বহির্ভূত না-ও হতে পারে। তারপরেও একটি কৌতূহল থেকে নয়, মানবমনের ক্রমববর্ধিষ্ণুতার সঙ্গে সঙ্গে সকল স্থানে জাতীয় আত্ম-সচেতনতার উন্নয়ন হচ্ছে অথবা জাতীয় ভাষার পুনর্জাগরণ হচ্ছে। আপনার কি মনে হয় না যে, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা থাকা সত্ত্বেও ইংরেজি ভাষার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংশোধন ও পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে?
ওয়েলস: আমার আশ্চর্য লাগছে যে ব্যাপারটি এখনো ঘটছে। ৪০ বা ৫০ বছর আগে এটি ঘটতে পারত, কিন্তু এখন সাহিত্য এবং সাধারণ কথ্য ভাষার ক্ষেত্রে ইংরেজি ও আমেরিকানদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা ক্রমশই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য দিকেও আরো বেশি প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এখন আমরা শব্দ-রূপান্তরের ক্ষেত্রে বাস্তব পদ্ধতি প্রয়োগ করছি। অনুবাদ একটি বিরক্তিকর কাজ। একটি কবিতা অনুবাদ করে দেখুন – এতে কি কবিতাটির স্বকীয়তা অনেকখানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না? একই সময় সব মানুষের কাছে যদি একে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেন, তবে সেটি হবে প্রকৃত অর্থেই চমৎকার।
রবীন্দ্রনাথ: বিভিন্ন দেশের সংগীতের রয়েছে একটি সাধারণ মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তি। কিন্তু এর অর্থ এ-ই নয় যে, জাতীয় সংগীতের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। আমার মতে, এই একই ব্যাপারটি সম্ভবত সত্য সাহিত্যের ক্ষেত্রেও।
ওয়েলস: আধুনিক সংগীত এক দেশ থেকে আরেক দেশে পরিভ্রমণ করছে কোনোরূপ ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই – পারসেল থেকে বাক, তারপর ব্রাহ্মস্, রাশিয়ান এবং তারপর প্রাচ্যে। বিশ্বের সবকিছুর মধ্যে সংগীত হচ্ছে সবচেয়ে আন্তর্জাতিক।
রবীন্দ্রনাথ: এ যুগের উপযোগী মনস্তাত্ত্বিকতা আমাদের সৃষ্টি করে নিতে হবে। সভ্যতার নতুন প্রয়োজন ও পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের নিজেদের সমন্বয় করে নিতে হবে।
ওয়েলস: সমন্বয়, চরম সমন্বয়!
রবীন্দ্রনাথ: আপনি কি মনে করেন যে, এক্ষেত্রে কোনো মৌলিক জাতিগত সমস্যা রয়েছে?
ওয়েলস: না। নতুন-নতুন জাতি সৃষ্টি হচ্ছে এবং পুনরাবির্ভূত হচ্ছে। অনন্ত এ গতিধারা। প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই জাতি-মিশ্রণের এ ব্যাপারটি চলে আসছে। ভারত এর সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্ণপ্রথা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও জাতি-মিশ্রণের ব্যাপারটি বর্তমান।
রবীন্দ্রনাথ: এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে জাতি-গৌরবের ব্যাপারে। পাশ্চাত্য কি সম্পূর্ণভাবে প্রাচ্যকে স্বীকার করে নিয়েছে? পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আমি সেই দেশটির জন্য খুব দুঃখিত হবো, যে দেশটি অন্য দেশের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে? শিক্ষা কখনো ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসে না, যদিও ড. হাস ও অঁরি মাতিসের মতো ব্যক্তিরা মনে করেন যে, প্রাচ্য-মনের উচিত নয় প্রাচ্য-দেশের বাইরে যাওয়া আর তাহলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
ওয়েলস: পাশ্চাত্যের আধিপত্য সম্ভবত গত একশ বছরের ঘটনা। লেপান্টোর যুদ্ধের আগে তুর্কিরা পাশ্চাত্যকে শাসন করত। তুর্কিদেরকে এড়ানোর জন্য কলম্বাসের সফরের আয়োজন করা হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ: ঊনবিংশ শতাব্দীর শরীরবিজ্ঞান সম্ভবত পাশ্চাত্যে জাতি-প্রাধান্যের এই ব্যাপারটি সৃষ্টি করেছে। শরীরবিজ্ঞান ব্যাপারটি যখন প্রাচ্যের আত্তীকরণ হলো, তখন সেই স্রোত পরিবর্তিত হয় এবং স্বাভাবিক গতিধারা লাভ করে।
ওয়েলস: আধুনিক বিজ্ঞান আসলে ইউরোপীয় নয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেসব উদ্ভাবন ও আবিষ্কার সংঘটিত হয়েছে – কিছু দুর্ঘটনা ও অদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে প্রাচ্যের লোকেরা তা প্রয়োগ করতে পারে নি। বর্তমানে জাপানি, চৈনিক এবং ভারতীয়রা বিশ্ববিজ্ঞানে যথাযথ স্বীকৃতি পাচ্ছেন।
প্রখ্যাত দার্শনিক, সাহিত্য-সমালোচক রোমাঁ রল্যাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যোগাযোগ ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। তখন রোমাঁ রল্যাঁ সঙ্কীর্ণ জাতীয়তা-বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যের বিষয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্যারিসে। এখানে যে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হলো, তা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে জেনেভায়। এটি প্রথম মুদ্রিত হয় ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে এশিয়ায়।
রবীন্দ্রনাথ: আপনি কি মনে করেন যে, বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জেনেভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে?
রল্যাঁ: হতে পারে, অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করছে, যেসব ক্ষেত্রে জেনেভার নিয়ন্ত্রণ নেই, সেগুলোর ওপর।
রবীন্দ্রনাথ: আমার মনে হয় যেসব শক্তি এক্ষেত্রে কাজ করছে, সেগুলোর মধ্যে জাতিসংঘ একটি। এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে কোনোভাবেই হোক এটি সবচেয়ে কার্যকর উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্বে এটি অধিকতর সঙ্গতি-রক্ষার ক্ষেত্রে শক্তিতে রূপান্তরিত হতে না-ও পারে। যেসব আন্তর্জাতিক, সামাজিক এবং স্বতন্ত্র গোষ্ঠী এখানে কাজ করছে, আমার আশা তারা জেনেভায় ক্রমে-ক্রমে আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডের এমন একটি কেন্দ্র গড়ে তুলবে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতিকে একটি কাঠামো দান করবে।
রল্যাঁ: আমরা দেখি, প্রচুর পরিমাণ মানুষ প্রাচ্য থেকে বাণী পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তারা মনে করে, ভারত – এবং আমি যোগ করতে চাই যে, নির্দিষ্টভাবে ভারতই এই বাণী পৌঁছে দিতে পারে সারা বিশ্বে।
রবীন্দ্রনাথ: লক্ষ করলে বিস্মিত হতে হয়, কীভাবে ভারত প্রথম আন্তর্জাতিক মনোভাবাপন্ন মানুষটিকে ঊনবিংশ শতাব্দীতে উপস্থাপন করল! আমি রাজা রামমোহন রায়ের কথা বলতে চাইছি। সত্যের প্রতি ছিল তাঁর প্রচণ্ড আবেগ। তিনি একটি গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভেঙে দিয়েছিলেন সব কুসংস্কার এবং ধর্মীয় আচারনিষ্ঠতা। তিনি বৌদ্ধধর্ম-সম্বন্ধে জানার জন্য তিব্বত গিয়েছিলেন। হিব্রু, গ্রিক, আরবি, ফারসি, ইংরেজি ফরাসি ভাষা শিখেছিলেন। তিনি ব্যাপকভাবে ইউরোপ সফর করেন। মৃত্যুবরণ করেন ব্রিস্টলে।
রল্যাঁ: আমি প্রায়ই বিস্মিত হই ভারতে আধ্যাত্মিক সহিষ্ণুতার গুণাবলি লক্ষ করে। এি ধরনের কিছু আমাদের পাশ্চাত্যে নেই। আপনাদের ধর্মের মহাজাগতিক প্রকৃতি এবং আপনাদের সভ্যতার যৌগিক চরিত্র একে সম্ভব করে তুলেছে। ভারতবর্ষ সব ধর্মকেই সুযোগ দিয়েছে যথাযথভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য।
রবীন্দ্রনাথ: এটি আমাদের দুর্বলতাও বটে। বৈষম্যমূলক সহিষ্ণুতার কারণে সব ধরনের ধর্মীয় মতবাদ ও ত্রুটি ভারতবর্ষে সাম্প্রতিক দাঙ্গা সৃষ্টি করছে। আমাদের আধ্যাত্মিক সত্যের প্রকৃত ভিত্তি-সম্বন্ধে অনুধাবন করার বিষয়টিকে কঠিন করে তুলেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, পশুবলির বিষয়টি আমাদের ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারপরেও ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে অনেক মানুষ একে বৈধতা দিয়েছে। এই ধরনের ধর্মীয় অস্বাভাবিকতা প্রতিটি দেশেই লক্ষ করা যায়। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ভারতবর্ষ থেকে এসব দূর করা এবং আমাদের যে প্রকৃত আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য রয়েছে সেই বৃহত্তর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করা।
রল্যাঁ: খ্রিষ্টীয় ধর্মগ্রন্থেও এই পশুবলির ব্যাপারটি রয়েছে। আদিপুস্তক ৪ অধ্যায় ৪ পদে রয়েছে হেবল পশু বলি দেয়ার কারণে ঈশ্বর তাঁর উপহার গ্রাহ্য করলেন।
রবীন্দ্রনাথ: আমি কখনোই পুরাতন নিয়মের ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারবো না।
রবীন্দ্রনাথকে কখনো ভুলি নি আমরা। ভোলার উপায় নেই। সুস্থ স্বাভাবিক সংস্কৃতি-চর্চার জন্য তাঁকে দরকার, মুক্ত চিন্তার জন্য তাঁকে দরকার। ব্যাপক শিক্ষা বিস্তারের জন্য তাঁকে দরকার। দেশে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা যত বাড়বে, শিক্ষার যত বিস্তার ঘটবে – রবীন্দ্রনাথ ততই ব্যাপক ও বিস্তৃত হবেন ব্যাপক জনগণের মধ্যে। শিক্ষা বিস্তার, সুস্থ সংস্কৃতির বিস্তারের কাজের পাশাপাশি রবীন্দ্রসাহিত্যকে পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের হাতে। সহজে সুলভে সর্বশ্রেণির মানুষ যাতে রবীন্দ্রসাহিত্য পড়তে পারে – সেই উদ্যোগই নিতে হবে এই রবীন্দ্র-জন্মতিথিতে এভাবেই হতে পারে কবির প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধা জানানোর পথ।